রক্তের একটি পরীক্ষাতেই ৩০ রকম ক্যানসার ধরা পড়বে। এমনই দাবি করেছেন নাসিকের বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস ও জরায়ুর ক্যানসারও রয়েছে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, এই সমস্ত রকম ক্যানসার নির্ভুল ভাবে শনাক্ত করতে আলাদা করে আর কোনও টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই। নতুন রক্ত পরীক্ষায় ক্যানসার কোষের জিনগত বদলও ধরা পড়বে। শুধু তা-ই নয়, ক্যানসার কোন পর্যায়ে রয়েছে, শরীরে কতটা ছড়িয়েছে, তা-ও ধরা যাবে।
‘ক্যানসার রিপোর্ট’ মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। অনকোলজিস্ট ও রোবটিক সার্জন রাজ নগরকর ও তাঁর টিম এই নতুন রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৬,৪৪৫ জনের উপর পরীক্ষাটি করে ৯৮.৪ শতাংশ নির্ভুল ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ২৮০০ জনের ক্ষেত্রে ক্যানসার একেবারে গোড়াতেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। কী ধরনের ক্যানসার, কতটা ছড়িয়েছে, তা বুঝে সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
প্রতিটি ক্যানসারের পরীক্ষা পদ্ধতি আলাদা। স্তন, কোলন, প্রস্টেট, ফুসফুস ও জরায়ুমুখের মতো ক্যানসারের জন্যে নানা রকম স্ক্রিনিং টেস্ট আছে। স্তন ক্যানসারের জন্য ম্যামোগ্রাফি, কোলন ক্যানসারের জন্য কোলনোস্কোপি, কম্বিনেশন স্টুল ব্লাড টেস্ট এবং প্রস্টেট ক্যানসারের জন্য রক্ত পরীক্ষা (প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) এবং ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্তকরণে স্বল্পমাত্রিক ফুসফুস সিটি স্ক্যানের মতো পদ্ধতিগুলি রয়েছে। এ বার এই সব কিছুই যদি একটি ‘ব্লাড টেস্ট’ থেকেই পাওয়া যায়, তা হলে সময়ও বাঁচে ও চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা সম্ভব হয়। ক্যানসারের প্রথম ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত নিরাময় করা সম্ভব। তাই যত দ্রুত রোগ ধরা পড়বে, ততই রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে।
চিকিৎসক নগরকর জানিয়েছেন, রক্তের নমুনা নিয়ে তা হাই-রেজ়োলিউশন মাস স্পেকট্রোমেট্রিতে পরীক্ষা করা হবে। যে ডেটা পাওয়া যাবে তার বিশ্লেষণ করবে ‘ক্যানসার ডিটেকশন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (সিডিএআই)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অ্যালগরিদ্ম ক্যানসার চিহ্নিত করবে নির্ভুল ভাবে। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিটিকে ‘মাল্টি-ক্যানসার আর্লি ডিটেকশন’ (এমসিইডি) নাম দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রক্তে কী কী ধরনের মেটাবোলাইট বা রাসায়নিক কণা ছড়িয়ে রয়েছে, তা দেখেই ক্যানসার চিহ্নিত করা হবে। প্রতিটি ক্যানসারের ধরন আলাদা, তাই ভিন্ন ভিন্ন রকম মেটাবোলাইট রক্তে ছড়িয়ে পড়বে। সেই দেখেই ক্যানসারের ধরন বুঝবেন চিকিৎসকেরা।