দিনভর পরিশ্রম। বাড়ি ফিরেও কাজের শেষ নেই। সংসার ও অফিস সামলাতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থায় পড়েন অনেকেই। দুশ্চিন্তা বাড়ে। তবে এই সব কারণই যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করছে, তা না-ও হতে পারে। মনের উপর বোঝা যদি বাড়তে থাকে, তার কারণ শুধু দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা নয়। এক শারীরিক সমস্যাও থাকতে পারে নেপথ্যে।
‘অ্যাপ্লায়েড ফিজ়িয়োলজি’ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, শরীরে জলের ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশনও হতে পারে মানসিক চাপের কারণ। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা দিনে দেড় লিটারের কম জল খান, তাঁদের ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের ক্ষরণ প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়। আর যাঁরা দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার বা তার বেশি জল পান করেন, তাঁদের মানসিক চাপ তুলনামূলক ভাবে কম।
আরও পড়ুন:
ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মোরিস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা সমীক্ষাটি চালিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, জল কম খেলে শরীরে জল ও খনিজ লবণের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। শরীরের জন জল যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন নানা খনিজ লবণও যেগুলি কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। এগুলিকে বলে ইলেক্ট্রোলাইট, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। জল কম খেলে এই খনিজ লবণগুলির মাত্রাও কমতে থাকে, ফলে মস্তিষ্কেরকোষেও অক্সিজেন কম পৌঁছয়। ফলে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়।
গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখার জন্য একটি দলকে দিনে দেড় লিটার জল (কোনও তরল খাবার নয়) খাওয়ান, অন্য দলকে দিনে তিন লিটার জল ও তরল খাবার খাওয়ান। মাসখানেক পরে দুই দলের লোকজনের সঙ্গেই কথা বলেন। দেখেন, যাঁরা জল বেশি খেয়েছিলেন তাঁরা অনেক বেশি সতেজ ও ফুরফুরে রয়েছে। আর যাঁরা জল কম খেয়েছেন, তাঁদের উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, মানসিক আরও বেড়েছে। কেউ কেউ প্যানিক অ্যাটাকেও আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষকেরা জানিয়েছেন, জলের ঘাটতি হলে আরও এক হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে যার নাম ভ্যাসোপ্রেসিন। এই হরমোন জল-খনিজের ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করে ঠিকই, পরিবর্তে কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণেও মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।