ক্যানসারের চিকিৎসা শুধু নয়, অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসাতেও রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োগ করতে চলেছেন গবেষকেরা। কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিয়েশনে আর্থ্রাইটিসের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন রোগীরা, এমনই দাবি গবেষকদের। দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিনে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় রেডিয়েশন থেরাপি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা ইতিমধ্যেই চলছে।
বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে ভুক্তভোগী মানুষ রয়েছেন প্রায় প্রতিটি পরিবারেই। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের সমীক্ষা বলছে, দেশের অন্তত ৩৯ শতাংশ মানুষ অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের শিকার। বেশি ভোগেন মহিলারাই। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ৪৫-৭০ শতাংশ মহিলার হাঁটুতে সমস্যা রয়েছে। কেউ বাতের ব্যথার ওষুধ খান, কাউকে ইঞ্জেকশন নিতে হয় আবার কারও হাঁটু প্রতিস্থাপন করানোর প্রয়োজন হয়। হাঁটু প্রতিস্থাপনের জটিলতা অনেক। সে জায়গায় ‘লো-ডোজ় রেডিয়েশন থেরাপি’ (এলডিআরটি) অনেক বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
প্রাথমিক ভাবে ১১৪ জন অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের রোগীর উপর রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, রোগীদের হাঁটুতে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিয়েশন দিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিয়েশন দিলে বাতের ব্যথার নিরাময় হয় খুব তাড়াতাড়ি, তবে তাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তবে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিয়েশন বা এলডিআরটি দিয়ে ধীরে ধীরে ব্যথাবেদনা নির্মূল করা যায়। এতে অস্থিসন্ধি ও তার চারপাশের কোষগুলির কোনও রকম ক্ষতি হয় না। গবেষকদের দাবি, এলডিআরটি এতটাই কার্যকরী হচ্ছে যে, ক্রনিক আর্থ্রাইটিসে ভোগা রোগীদেরও যন্ত্রণা নির্মূল হওয়ার পথে। এমনকি, হাঁটু প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনও পড়বে না।
বয়স বাড়লে এক দিকে ক্যালশিয়াম কমে যায়, অন্য দিকে হাঁটু, হিপ জয়েন্ট-সহ সহ অন্যান্য অস্থিসন্ধির হাড় ক্ষয়ে যায়। আর ক্ষয়ে যাওয়া অস্থিসন্ধির ঘর্ষণে পা এবং ঊরুর জয়েন্টে চাপ পড়ে। এই কারণেই ব্যথা হয়। অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস হলে অস্থিসন্ধির কার্টিলেজও ক্ষয়ে যায়। হাড় ক্ষয়ে গিয়ে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে হিপ জয়েন্ট বিকৃত হয়ে হাঁটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়, ভয়ানক যন্ত্রণায় কষ্ট পেতে হয়। রেডিয়েশন থেরাপি এই যন্ত্রণা কমাতে পারবে বলেই আশা গবেষকদের।