তাপমাত্রার পারদ যত নামছে, ততই যেন বুকে পাথর চেপে বসছে। কখনও চিনচিনে ব্যথা, কখনও দমবন্ধ, হাঁসফাঁস দশা। ঘুমোতে গেলেই বুকের ভেতর সাঁই সাঁই শব্দ। শ্বাস নিতে গেলে কাশির দমকে অস্থির। ঘন ঘন বুকে কফ, লাগামছাড়া হাঁচি, অ্যালার্জির সমস্যা জানান দেয় বিষয়টি মোটেই স্বাভাবিক নয়। শ্বাসের কষ্ট যদি উত্তরোত্তর বাড়ে, শ্বাস নিতে গেলে বুকে ব্যথা হয়, তা হলে বুঝতে হবে, সেটি ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’-র লক্ষণ। গবেষণা বলছে, হাঁপানির এই বিষম টানই হতে পারে হৃদ্রোগের কারণ। বিশেষ করে এই শীতে বয়স্কদের ঝুঁকিই বেশি।
হাঁপানির সঙ্গে হার্টের কী যোগ?
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, হাঁপানির টান বাড়লে হার্টের উপরেও চাপ পড়ে। এমনকি শ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কাও বাড়ে।
আরও পড়ুন:
গোটা দেশেই দূষণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে হাঁপানি আরও প্রবল ভাবে আসর জমিয়ে বসছে। দীপাবলি, ছটপুজোতে আতসবাজির বাড়বাড়ন্ত পেরিয়ে এখন শীতের কুয়াশা, গাড়ির ধোঁয়া, ফুলের রেণু, কার্বন-মনোক্সাইড সব মিলিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার রাস্তাটুকুও বন্ধ। অল্প হাঁটলেই বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট। সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হচ্ছেন হাঁপানি, সিওপিডি-তে। হাঁপানি হয় মূলত শ্বাসনালিতে প্রদাহের কারণে। দীর্ঘকালীন প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির স্বাভাবিক ব্যাস কমে যায় এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে। ফলে ফুসফুসের ভিতর বায়ু ঢোকা ও বেরোনোর পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। শ্বাসনালির ভিতরে মিউকাসের ক্ষরণ বাড়তে বাড়তে সেটি আরও সঙ্কুচিত হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে শ্বাসনালি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। শ্বাসনালিতে প্রদাহ যত বাড়ে ততই অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকে। হার্টেও অক্সিজেন সরবরাহ কমতে থাকে। ফলে হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় ও ছন্দের হেরফের হতে থাকে। হৃৎস্পন্দন যদি অনিয়মিত হয়ে যায়, তখনই সমস্যা শুরু হয়। এই অনিয়মিত স্পন্দনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া’।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ‘সিভিয়ার’ হাঁপানির রোগীরা রাতে ঘুমনোর সময় ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারেন না। ঘুমের মধ্যেই টান উঠতে পারে, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। আর তার থেকেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার শঙ্কাও বাড়ে।
সাবধান হবেন কী ভাবে?
শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম বা ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ়’ করা খুব জরুরি। এই ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে ফুসফুসে বাতাস ঢোকা এবং বার করার পরিমাণ বাড়ে।
বাইরে থেকে এসে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ব্যাগে স্যানিটাইজ়ার রাখলে খুব ভাল হয়।
ঘন ঘন দুধ চা বা কফি খাবেন না। বাইরে বেরোলে নরম পানীয়, ঠান্ডা শরবত বা আইসক্রিম ভুলেও খাবেন না। যদি শ্বাসকষ্ট হয় বা হাঁপানির টান ওঠে, তা হলে ঈষদুষ্ণ জলে একচিমটে নুন ফেলে খেতে পারেন। তাতেই আরাম পাবেন।
নিয়মিত কপালভাতি করলেও ফুসফুস ভাল থাকবে। আরামদায়ক কোনও একটি আসনের ভঙ্গিতে বসুন। মাথা ও মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের পেশির উপর চাপ দিতে হবে। দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। নিয়মিত করলে শ্বাসের সমস্যা কমে যাবে।