Advertisement
E-Paper

স্মৃতির কুঠুরি চাঙ্গা হবে, বদলাবে জিনও, অ্যালঝাইমার্সকে জব্দ করার উপায় খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

অ্যালঝাইমার্সকে কাবু করার চিকিৎসা খুঁজতে গোটা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। এত দিনে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি উপায় বার করেছেন গবেষকেরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ১৩:৪১
New Study says, Exercise has well-known protective effects in Alzheimer’s disease

শরীরচর্চায় বদলে যায় মস্তিষ্কের কোষও, কী দেখে চমকে গেলেন বিজ্ঞানীরা? ছবি: এআই।

ওজন দেড় কিলোগ্রামেরও কম। আর সেই মস্তিষ্ক মানুষের জীবনযাত্রার মান পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখার কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কী ভাবে বোঝা যাবে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কোষগুলি আদৌ সতেজ আছে কি না? মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, ততই চারপাশে বাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা, যাঁদের স্মৃতি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, এর নিরাময়ের কোনও ওষুধ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। রোগটি অ্যালঝাইমার্স, যার চিকিৎসা খুঁজে বার করতে গোটা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। এত দিনে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি উপায় বার করেছেন গবেষকেরা। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের গবেষকেরা জানিয়েছেন, শরীরচর্চাই এমন একটি উপায়, যা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, স্মৃতি আসলে এক জৈব-রাসায়নিক রচনা। মস্তিষ্কের মধ্যে কয়েক লক্ষ কোটি স্নায়ুকোষের (নিউরন) আদানপ্রদানের মাধ্যমে স্মৃতি তৈরি হয়। যে কোনও কোষের মতো, স্নায়ুকোষও তৈরি হয় প্রোটিন দিয়ে। যখন এই কোষগুলির প্রোটিন ভাঙতে থাকে, তখন তাদের দ্বারা নির্মিত স্মৃতিও টালমাটাল হয়ে যায়। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশে এমন অদলবদল হয় যে, স্মৃতির পাতাই ধূসর হতে থাকে। হিপ্পোক্যাম্পাস হল মস্তিষ্কের স্মৃতির কুঠুরি, যেখানে স্মৃতি জমা থাকে। ওই অংশে আরও একটি এলাকা রয়েছে, যার নাম ‘ডেন্টেট জাইরাস’। ওই অংশটি স্মৃতি সংরক্ষণ করে, স্মৃতি তৈরি করে। শরীরচর্চা করলে ওই এলাকাটি চনমনে হয়ে ওঠে। মস্তিষ্কের কোষ নতুন করে তৈরি হয়, ফলে স্মৃতির কুঠুরিতে মরচে ধরতে পারে না।

‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ গবেষণাপত্রে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের গবেষক ক্রিস্টিয়ান রান জানিয়েছেন, শরীরচর্চা নির্দিষ্ট নিয়মে ও সময় মেপে করলে হিপ্পোক্যাম্পাস অংশটির জিনে বদল আসে। ইঁঁদুরের উপর পরীক্ষা করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকেরা। অ্যালঝাইমার্সের পরীক্ষায় যে ইঁদুরগুলিকে ‘অবজেক্ট’ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল, তাদের কয়েকটিকে ৬০ দিন ধরে দৌড় করিয়ে দেখা গিয়েছে, তাদের হিপ্পোক্যাম্পাস অংশের জিনে বদল এসেছে। বিশেষ করে ‘এটিপিআইএফ১’ জিনটি সক্রিয় হয়েছে। এই জিনই নতুন নিউরন বা স্নায়ুর কোষ তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। যত বেশি স্নায়ুর কোষ তৈরি হবে ও সেই সব কোষের সক্রিয়তা বাড়বে, ততই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে। বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি দুই-ই উন্নত হবে।

শরীরচর্চায় আরও কিছু উপকার হয় মস্তিষ্কের। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরচর্চা মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা নিউরনগুলিতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ উন্নত করে। পাশাপাশি মস্তিষ্কে সুরক্ষাকবচও তৈরি করে। সেটি কী ভাবে? মস্তিষ্কের ভিতরেও প্রতিরক্ষার একটি দেওয়াল আছে। সেখানে বিশেষ কিছু কোষ থাকে, যারা মস্তিষ্ককে জীবাণু সংক্রমণ, চোট-আঘাত থেকে রক্ষা করে। তেমনই একটি কোষ হল মাইক্রোগ্লিয়া। এই কোষটি সজীব থাকলে স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ে। স্মৃতিশক্তিও বাস। শরীরচর্চায় এই কোষগুলিও উজ্জীবিত হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, অ্যালঝাইমার্সকে কাবু করার মতো চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও আসেনি। তবে যদি নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করা যায়, তা হলে স্মৃতিশক্তি বিলোপের আশঙ্কাই তৈরি হবে না। স্মৃতিনাশ বা স্নায়ুর জটিল রোগের প্রকোপ অনেক কমে যাবে।

Alzheimer disease Brain Power Tips Memory Loss
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy