কথায় বলে 'বাহাত্তুরে বুড়ো'! কিন্তু রজনীকান্তকে দেখলে কেউ বলবে কি তিনি ৭২ পেরিয়ে এখন ৭৪? এখনও পর্দায় এলে নায়ক হয়েই আসেন। আর ৭৪-এর রজনীকান্তকে পর্দায় দেখতে আজও সিনেমাহলে ভিড় জমে ভক্তদের। প্রথম সপ্তাহান্তে একশো কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলে ছবি! মুখের বলিরেখা না হয় মেকআপে ঢাকা দেন, চুলের কেতা তৈরি করেন পরচুলায়। কিন্তু নায়কোচিত ‘সোয়্যাগ’-এর জন্য তো অনেকখানি ফিটনেসেরও দরকার। এই বয়সে সেই ফিটনেস কোথা থেকে জোটান রজনী? ‘চুয়াত্তুরে’ নায়কের দিনলিপির দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে, কোথা থেকে ওই উদ্যম পান রজনী। দেখা যাবে, শরীরচর্চাই রজনীর জাদুকাঠি। তবে তার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়া, বিশ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যও কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলেন তিনি।
১। ভোরবেলায় শরীরচর্চা
ভোর ৫টায় দিন শুরু হয় রজনীকান্তের। তার পরেই শুরু হয় শরীরচর্চা। প্রথমে জগিং করতে বেরোন, তার পরে সাঁতার কাটেন এবং শেষে শুরু হয় নানা ধরনের ব্যায়াম। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ় তো থাকেই, থাকে স্ট্রেংথ ট্রেনিং এবং সেই সঙ্গে একটি অতি পরিচিত ব্যায়াম গুরুত্ব সহকারে করেন রজনী। সেটি হল স্কোয়াট। কারণ ওই একটি ব্যায়াম পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার কাজ করে, এমনকি অস্থিসন্ধির সমস্যাও দূরে রাখে।
২। ধ্যান এবং ক্রিয়াযোগ
ধ্যান না করে দিনের কাজ শুরুই করেন না রজনী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর দৈনন্দিন সমস্ত কাজের সুতোটা বাঁধা হয় ওই ধ্যানে। দিনে অন্তত মিনিট ২০ ধ্যান করেন অভিনেতা। তার মধ্যে ব্রিদিং এক্সারসাইজ় যেমন থাকে, তেমনই থাকে নানা ধরনের ক্রিয়াযোগ। রজনী বলেছিলেন, ‘‘ধ্যান মনকে শান্ত রাখতে যেমন সাহায্য করে, তেমনই কাজে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করতেও কার্যকর।’’
৩। পরিচ্ছন্ন এবং নিরামিষ খাবার
খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে খুব কড়া নিয়ম মানেন না রজনী। তবে তাঁর খাবারে খুব বেশি তেলমশলা থাকে না। প্রক্রিয়াজাত এবং বাইরের খাবারও তিনি খান না। চিনি দেওয়া খাবার, ফাস্ট ফুড বাদ দিয়েছেন বহু দিন। রিফাইনড ডেয়ারি অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিশোধিত দুগ্ধজাত খাবার, যেমন চিজ়, মিল্ক পাউডার, হুইপড ক্রিম, কফি ক্রিমারস এবং কিছু বিশেষ ধরনের আইসক্রিমও এড়িয়ে চলেন রজনী। তবে বাড়িতে তৈরি যে কোনও নিরামিষ খাবারই খান। ফল, তাজা শাকসব্জি, ডাল এবং বাদামজাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন:
৪। বিশ্রাম এবং নিরাময়
ঘুমের ব্যাপারে কোনও আপস করেন না রজনীকান্ত। তিনি মনে করেন, সারা দিনের কাজে শরীরের উপর যে ধকল যায়, তা থেকে শরীরকে সেরে ওঠার সময় দিতে হয়। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের মাধ্যমে তা সম্ভব। বিষয়টি তাঁর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রতিটি ছবির কাজ শেষ করার পরে হিমালয়ে প্রকৃতির কোলে বেড়াতে চলে যান রজনী। যাতে সিনেমা চলাকালীন ঘটে যাওয়া নানা অনিয়ম এবং অত্যাচারের পরে শরীরের সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।
৫। একটি বিশেষ দর্শন
রজনীকান্ত একটি বিশেষ দর্শন মেনে চলেন। আর তা হল— কোনও কিছুই অতিরিক্ত নয়। অল্পেই সন্তুষ্ট হওয়া। তিনি বলেন, "কম চাহিদা, কম ভাবনা, কম খাওয়া, প্রয়োজনীয় ঘুম এবং নিয়মিত শরীরচর্চা" তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। এক সাক্ষাৎকারে রজনী জানিয়েছেন, তিনি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে স্বল্পতাবাদে বিশ্বাসী। তবে এই নীতি সামাজিক যোগাযোগ, বন্ধুত্ব এবং ইতিবাচক মনোভাবের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন না।
অর্থাৎ থালাইভা তাঁর বয়সকে হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছেন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের মাধ্যমে। যে অভ্যাস তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন।