ধূমপানের পাশাপাশি বায়ুদূষণের কারণেও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। 'ল্যানসেট' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে, গোটা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে মৃত্যুর যে হার, তার মধ্যে সংখ্যার নিরিখে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন ফুসফুসের ক্যনসারে আক্রান্ত অ-ধূমপায়ীরা। বিশেষ করে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের ফুসফুস ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। আগে সামাজিক পরিবেশ বিচার করে দেখা যেত, ধূমপায়ীদের সংখ্যায় পুরুষ বেশি। তাই ফুসফুসের ক্যানসারে পুরুষেরাই বেশি আক্রান্ত হতেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ধূমপায়ী হিসেবে মহিলাদেরও অংশ বাড়ছে। তাই এমনিতেই ফুসফুসের ক্যানসারে মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু ভারতীয় মহিলাদের জন্য তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের কাজও বড় ভূমিকা পালন করছে। আর সে বিষয়েই সতর্ক করলেন ক্যানসার চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায়।
আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে ফুসফুস ক্যানসারের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে। কারণ, ধূমপান না করেও খুব সহজে এই রোগের কবলে পড়ছেন মহিলারা। বিপদ রোজের গৃহস্থালির কাজ থেকেই দেখা দিচ্ছে। এই গোটা চিত্র বিশেষ করে এশিয়াতেই বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ অনেক ক্ষণ ধরে আগুনের আঁচে রান্না করার রীতি পাশ্চাত্যে কম। এই রান্নার ধোঁয়া থেকেই বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। ফলে অনেক দিন পর্যন্ত মহিলারা জানতেও পারছেন না, তাঁর ফুসফুসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে।
চিকিৎসক বলছেন, ‘‘যাঁদের রান্নার অভ্যাস রয়েছে, বা যাঁদের কাজই রান্না করা, তাঁদের শীঘ্র সতর্ক হওয়া উচিত। কেউ কেউ ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রান্নার আঁচ ও ধোঁয়ার সামনে থাকেন। তা ছাড়াও বন্ধ ঘরে ধূপকাঠি জ্বালানো, মশার ধূপ জ্বালানো, ইত্যাদির ফলে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে পরিবেশগত ধোঁয়া ঢুকে যাচ্ছে। এগুলিও রয়েছে কারণের তালিকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তরফে একটি বিবৃতিতে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রথম কারণ হিসেবে পরিবেশগত ধোঁয়ার কথা জানানো হয়েছে। যা সরাসরি সিগারেট বা বিড়ি থেকে নয়, পরিবেশ থেকে শরীরে ঢুকছে। পশ্চিমের দেশে আসলে ধূমপানের প্রবণতা কমছে সচেতনতা বৃদ্ধির জেরে। কিন্তু এশিয়ায়, ভারতে এখনও ধূমপায়ীদের সংখ্যা কমেনি। ফলে সব মিলিয়ে হু এই গবেষণা করেছে।’’
বদ্ধ ঘরে নয়, খোলামেলা জায়গায় ধূপকাঠি জ্বালাতে হবে। ছবি: এআই
সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অ-ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ফুসফুস ক্যানসার ধূমপায়ীদের থেকে আলাদা। চিকিৎসাও ভিন্ন ভাবে হয়। মলিকিউলার টেস্টের মাধ্যমে দেখা হয়, ইজিএফআর, এএলকে, আরওএস১ ইত্যাদি জিন অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে কি না। কারণ, এ ক্ষেত্রে এই অস্বাভাবিকত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই রোগ কেমোথেরাপির তুলনার ট্যাবলেটের মাধ্যমে অনেক বেশি দিন নিয়ন্ত্রিত থাকে ও পার্শপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সতর্ক হওয়া উচিত সকলের—
১। রান্নার সময় কমাতে হবে।
২। এগজ়স্ট ফ্যান চালিয়ে রান্না করতে হবে।
৩। বদ্ধ ঘরে ধূপকাঠি জ্বালানো যাবে না। খোলামেলা জায়গায় ধূপকাঠি জ্বালাতে হবে।
৪। মশার ধূপ যদি ব্যবহার করতেই হয়, তা হলে পাখা চালিয়ে, নাকের থেকে দূরে রেখে ঘুমোতে হবে।
সরাসরি যেন কোনও ভাবে নাকে না আসে কোনও ধরনের ধোঁয়া। এটি একমাত্র সতর্কতা।