টানা ১৪ দিন ধরে নয়। বরং একবার খেলেই, পেটের ভিতরে থেকে যাওয়া ম্যালেরিয়ার জীবাণু নষ্ট হবে। এমনই ওষুধ তৈরি করেছে সুইৎজ়ারল্যান্ডের ওষুধ নির্মাতা সংস্থা নোভার্টিস। আফ্রিকার ১২টি দেশ ও সুইৎজ়ারল্যান্ডে ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, ওষুধটি খেলে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে। রোগও সারবে খুব তাড়াতাড়ি। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেড়ে যাবে বহুগুণে। এ দেশে এখনও ওষুধটির আসার সম্ভাবনা নেই। তবে গবেষণায় সফল হলে খুব তাড়াতাড়ি আরও অনেক দেশে ওষুধটি পৌঁছে দেবে নোভার্টিস।
ম্যালেরিয়ার অনেক ওষুধই এসেছে এ যাবৎ। টিকা আনার চেষ্টাও চলছে। মশাবাহিত এই জাঁদরেল রোগ এশিয়া ও আফ্রিকায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বহু বছর ধরে। আফ্রিকার অনেক দেশেই ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর হার খুব বেশি। এর আগেও ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরি হয়েছিল, তবে তেমন লাভ হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ফলাও করে জানিয়েছিল, ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক এসে গিয়েছে। এ বার মারণ অসুখের প্রকোপ কমে যাবে। আদতে তা হয়নি। প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামকে যেন কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না কোনও প্রতিষেধক। নতুন ওষুধটি সেখানে কতটা আশা জাগাতে পারবে, তার পরীক্ষা চলছে।
ওষুধের নাম ‘গ্যানলাম’। আমেরিকার জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরাও ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। গবেষক ডেভিড সুলিভান জানিয়েছেন, ম্যালেরিয়ার যে ক’টি ওষুধ আছে তার বেশির ভাগই প্রতিরোধের মুখে। ঠিক অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্টের মতো। অত্যধিক পরিমাণে খাওয়ার কারণে যেমন চেনা অ্যান্টিবায়োটিকও তেমন ভাবে কাজ করছে না, তেমনই ম্যালেরিয়ার ওষুধও ধীরে ধীরে বিফলই হচ্ছে বলে দাবি গবেষকদের। ম্যালেরিয়ার জীবাণু ওই সব ওষুধের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তাই এমন ওষুধ প্রয়োজন, যা ম্যালেরিয়া জীবাণুর বংশ ধ্বংস করবে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে।
দেশে ম্যালেরিয়া এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ম্যালেরিয়ার ‘ভাইভ্যাক্স’ প্রজাতির জীবাণুতে এক বার কেউ আক্রান্ত হলে, সেটি শরীরে থেকে যায়। চিকিৎসায় জ্বর কমে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরে ফের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় ওই রোগীর। কারণ জীবাণু শরীরে থেকে যায়। সাধারণত ম্যালেরিয়ায় জ্বর কমানোর জন্য ক্লোরোকুইন দেওয়া হয় রোগীকে। সেটি খাওয়ার পরে আরও একটি ওষুধ দেওয়া হয় যা শরীর থেকে জীবাণু নির্মূল করতে পারে। সেই সপ্তাহ দুয়েক ধরে খেয়ে যেতে হয়। তবে অধিকাংশ রোগীই আরও ১৪ দিন ওষুধ খেতে রাজি হন না, অনেকের শরীরে আবার ওষুধটি ঠিকমতো কাজও করে না। তবে নতুন ওষুধটিতে সে ঝামেলা নেই বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা। ওষুধটি পুরিয়ার মতো পাউডারে পাওয়া যাবে। সেটি খেলেই নাকি জীবাণু সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল হবে। তবে ওষুধটি বাজারে আসতে এখনও কিছুটা দেরি আছে বলেই জানা গিয়েছে।