বিরল রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয় দেশে। সে তালিকায় এগিয়ে রয়েছে কলকাতাও। পরিসংখ্যাণ বলছেন, দেশে কম করেও ৭ কোটি মানুষ বিরল রোগে আক্রান্ত। সে রোগ অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার হতে পারে, জেনেটিক রোগ বা স্নায়ুর কোনও রোগও হতে পারে। কলকাতা শহরে এই বিরল রোগের সন্ধান পেতে উদ্যোগ শুরু করছে কলকাতা পুরসভা। ‘কল্যাণ নিরুপনম যোজনা’ নামে একটি প্রকল্পও শুরু হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা ক্যাম্প করে শহরের কোথায় বিরল রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন, তাঁর খোঁজ চলছে। অভিজ্ঞ আশা কর্মীদের এই কাজে নিয়োগও করা হয়েছে।
এখন কথা হল, বিরল রোগ নিয়ে যে এত চর্চা হচ্ছে, তার মানে কি রোগ বেড়ে চলেছে? তা একেবারেই নয়। বরং রোগ নির্ণয় আগের থেকে দ্রুত ও আধুনিক পদ্ধতিতে হচ্ছে, এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আগে যে রোগ শণাক্ত করাই যেত না অথবা ভুল চিকিৎসা হত, এখন তা অনেক কমেছে। আরও বেশি আধুনিক পদ্ধতিতে রোগের শণাক্তকরণ ও চিকিৎসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বর্ধমান জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। এই ব্যাপারে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন তিনি।
শিশু বিরল রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময় অভিভাবকরা বুঝতে পারেন না। কিন্তু সে যখন বড় হয়, তখন বোঝা যায়, সে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রোগ আগে ধরা পড়লে অনেক সময় তার চিকিৎসা আগে থেকেই করা সম্ভব হয়। এই সচেতনতা এতদিন ছিল না, কিন্তু এখন হচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, আরও বেশি জেনেটিক টেস্টিং হতে হবে। রোগ দ্রুত শনাক্ত করা গেলে আক্রান্ত শিশুর আগামী জীবনের পথ চলা অনেক বেশি সহজ হবে বলেই মত তাঁর।
বিরল রোগের চিকিৎসায় পরিকাঠামো বাড়াতে চেষ্টা করছে সরকার। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো উন্নত হচ্ছে। চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, গুরুত্বপূর্ণ কিছু রক্তের পরীক্ষা, জেনেটিক কাউন্সেলিং আরও উন্নত হলে বিরল অটোইমিউন ডিজ়অর্ডার বা স্নায়ুর কিছু ব্যাধি গোড়াতেই চিহ্নিত করা যাবে। পরিবারে বিরল রোগের ইতিহাস আছে কি না, পরবর্তী প্রজন্মে সেই রোগ ছড়াচ্ছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। এর জন্য সমীক্ষাও জরুরি। আর প্রয়োজন সাধারণ মানুষের সচেতনতা। গ্রামেগঞ্জে অনেক সময়েই দেখা যায়, মানুষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন। সেই দিকেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বিরল রোগের ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি প্রায় সবই বিদেশি। এ দেশে ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে হয়। সেই ট্রায়ালের নিয়ম যদি সরল হয় এবং বিরল রোগের চিকিৎসায় যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন হয় তার পণ্য-পরিষেবা কর এবং আমদানি শুল্কে ছাড় যদি দেওয়া হয়, তা হলে চিকিৎসায় বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।