Advertisement
E-Paper

ব্যথানাশক ওষুধ মেয়েদের শরীরে কম কাজ করে? কেন এমন বলছেন গবেষকেরা?

ব্যথানাশক ওষুধ কি সত্যিই মহিলাদের শরীরে কম কাজ করে? গবেষণা নিয়ে কী মতামত চিকিৎসকদের?

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩৪
Why Pain medication does not work well in females

সম্ভাব্য কী কী কারণে ব্যথানাশক ওষুধ ঠিকমতো কাজ করে না মেয়েদের শরীরে, জানালেন গবেষকেরা। ফাইল চিত্র।

ব্যথানাশক ওষুধ মহিলাদের শরীরে নাকি কম কাজ করে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে নানা গবেষণায়। বলা হচ্ছে, একজন পুরুষের ক্রনিক ব্যথা থাকলে তা ওষুধ খেলে সেরে যেতে পারে। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অত সহজে হবে না। হয় ব্যথানাশক ওষুধটি কাজই করবে না, না হলে অনেক বেশি ডোজ়ে খাওয়াতে হবে। এই বৈষম্য কেন?

১৯৯০ সাল থেকেই এই নিয়ে গবেষণা চলছে। এ দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ’ জানিয়েছে, ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন, কোনও কোনও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মহিলাদের শরীরে কম কাজ করছে। কয়েক রকম ক্রনিক রোগের ব্যথা, মাইগ্রেন, পিঠ-কোমরের ব্যথা সারছেই না। একই দাবি আমেরিকার ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এরও। তারা জানিয়েছে, মহিলাদের মাইগ্রেন, ঋতুস্রাব, বাত জনিত ব্যথা সারাতে ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রাইবই করা হয় না বেশির ভাগ সময়ে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, চেনা ব্যথানাশক ওষুধগুলি মহিলাদের শরীরে ঠিকমতো কাজ করে না। আর বেশি ডোজ়ে খাওয়াতে গেলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।

২০০০ সালে এই বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, মহিলা ও পুরুষদের শারীরিক গঠন আলাদা। হরমোনের ওঠানামার প্রক্রিয়াও আলাদা। তাই যে ব্যথানাশক ওষুধটি পুরুষের শরীরে ভাল কাজ করছে, তা মহিলাদের শরীরে কার্যকরী না-ও হতে পারে। তা ছাড়া আরও অনেক কারণ রয়েছে।

কী কী সেই কারণ?

প্রথমত, ২০১৬ সাল অবধি যে কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পুরুষদের উপরেই যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা বেশি করা হত। কোন ওষুধটি মানুষের শরীরে কাজ করবে আর কোনটি নয়, তা পরীক্ষা করে দেখতে পুরুষরাই হতেন ‘অবজেক্ট’। তাই বেশির ভাগ পুরনো ব্যথাবেদনার ওষুধ এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যা পুরুষের শরীরেই ঠিকমতো কাজ করতে পারবে।

দ্বিতীয়ত, হরমোনের তারতম্যও এর বড় কারণ। গবেষকেরা দাবি করছেন, মহিলাদের শরীরে যে ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকে, তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিম্বাশয়, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি এবং অ্যাডিপোজ় কোষ থেকে এই হরমোন তৈরি হয়, যা প্রজননে বড় ভূমিকা নেয়। এই হরমোনটি মহিলাদের হাড়ের গঠনেও সাহায্য করে। ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য হলে ব্যথাবেদনা বেড়ে যেতে পারে আবার কমেও যেতে পারে। সেটা নির্ভর করে, হরমোন কোথা থেকে ও কী পরিমাণে ক্ষরিত হচ্ছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। পুরুষের শরীরে টেস্টোরস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম থাকে এবং এই হরমোন ব্যথাবেদনা সারাতে বড় ভূমিকা নেয়। তাই অনেক সময়েই পুরুষদের শরীরে ক্রনিক ব্যথা সারাতে টেস্টোস্টেরন থেরাপিও করা হয়।

তৃতীয়ত, মহিলা ও পুরুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধী কোষগুলির (ইমিউন কোষ) মধ্যেও পার্থক্য বিস্তর। মস্তিষ্কে এক প্রকার ইমিউন কোষ আছে যার নাম ‘মাইক্রোগ্লিয়া’। এর কাজ হল মস্তিষ্কে প্রদাহ কমানো ও ব্যথা নাশ করা। পুরুষের শরীরে এই কোষটিই কাজ করে। ব্যথানাশক ওষুধ এই কোষটিকে সক্রিয় করে তুলতে পারলেই ব্যথার তীব্রতা অনেক কমে যায়। কিন্তু মহিলাদের শরীরে এই কাজটিই করে টি-কোষ। আর টি-কোষের সংখ্যা যদি কম থাকে, তা হলে ব্যথা সারতেও দেরি হয়।

গবেষণাটি সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, এই নিয়ে চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, “গবেষণাটি কত জনের উপর করা হয়েছে সেটিই আসল। ব্যথানাশক ওষুধ সব মহিলার শরীরেই কম কাজ করবে, এমন নয়। আসলে, অনেক মহিলার ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্টেরয়েড বা ওই জাতীয় ওষুধ খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। সে কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়াও ঠিক নয়। সঠিক ডোজ়ে ও নিয়ম মেনে ওষুধ না খেলে না কখনওই ঠিকমতো কাজ করবে না।”

ব্যথাবেদনা পুরুষদের তাড়াতাড়ি সারে আর মহিলাদের কম, এই বিষয়টি নিয় সহমত নন চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীও। এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেন তিনি।

painkillers hormonal imbalance Women Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy