Advertisement
E-Paper

মনের অসুখ মানেই মস্তিষ্কের বিকৃতি নয়,যন্ত্রণার গভীরে গিয়ে মনোরোগের শুশ্রূষার পথ দেখাল 'সমীক্ষণী'

মনোরোগের শুশ্রূষা করতে গেলে ক্ষত চেনাটাই প্রাথমিক কাজ। তা হলেই মনের কষ্টে মলম দেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রোগীকেও তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পথটা অনেক সহজই হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১৬:৩৪
Role of non-human environment in our internal world

সমাজ ও চারপাশের সম্পর্কগুলিও মনের ক্ষতের কারণ হতে পারে, আসল কারণ চেনা খুব জরুরি। ছবি: ফ্রিপিক।

শরীরের অসুখ মুখ ফুটে বলা যত সহজ, মনের অসুখ ততটা নয়। এক জনের মনের গভীরের কোন জায়গায় ক্ষত হয়ে আছে, তা বোঝা অত সহজ নয়। পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এমকি চেনা-অচেনা সম্পর্কগুলির মধ্যেও মনের অসুখের বীজ নিহিত থাকতে পারে। যন্ত্রণার গভীরে গিয়ে ছেঁড়াফাটা সেই জায়গাটা চিনে নিয়ে তার চিকিৎসা করাই আসল কাজ। মনোরোগের শুশ্রূষা করতে গেলে সেই ক্ষত চেনাটাই প্রাথমিক কাজ। তা হলেই মনের কষ্টে মলম দেওয়া সম্ভব। রোগীকেও তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পথ অনেক সহজ হয়। সেই সচেতনতার বার্তাই তুলে ধরল মনোসমীক্ষণ ও মনোবিশ্লেষণ সংস্থা 'সমীক্ষণী'।

সংস্থার ৪৫ বছরের উদ্‌যাপনে মনোরোগ গিয়ে আলোচনাসভা আয়োজিত হয়েছিল কলকাতায়। নানা মানসিক সমস্যা ও তার থেকে পরিত্রাণের বিভিন্ন পথ নিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোথেরাপিস্ট ও মনো-সমাজকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে নানা ছোট ছোট বিষয় যা মনোরোগের চিকিৎসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সভায় মতামত দেন সাইকোথেরাপিস্ট চন্দনা বক্সী, 'সোয়াম'-এর কর্ণধার অনুরাধা কাপুর, 'অঞ্জলি'র কর্ণধার রত্নাবলী রায়, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের অধিকর্তা তুলিকা দাস, সাইকোথেরাপিস্ট সৌম্য চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ বসু, শ্রাবণী সরকার নিয়োগী-সহ আরও অনেকে। সমাজ, পরিবেশ ও চারপাশের সম্পর্ক কী ভাবে মনের অসুখের কারণ হয়ে উঠছে এবং তার থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী, সেগুলিই ছিল আলোচনার মূল বিষয়। সেখানে কেবল মনোরোগী নন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও ছিল আলোচ্য বিষয়। পাশাপাশি, মনের অসুখ সারাতে যাঁরা এগিয়ে আসেন, সেই সমাজকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার কথাও বলেন মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসকেরা।

কর্মক্ষেত্র থেকে পারিবারিক জীবন— সর্বত্রই নানা কারণে কারও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। অথচ, সেটাই অনেক সময়ে উপেক্ষিত হয়। দীর্ঘ দিনের অবসাদ, একাকিত্ব, সম্পর্কে অবনতি বা বিচ্ছেদের যন্ত্রণা ধীরে ধীরে মনের অসুখের কারণ হয়ে ওঠে। এই অসুখ সারানোর দাওয়াই কেবল জটিল চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং হতে পারে না। আগে অসুখের কারণ বোঝাও জরুরি। মনোরোগ চিকিৎসকেরা জানান, সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই ক্ষত মেরামতির কাজ অনেকটা এগিয়ে যায়। যিনি যন্ত্রণায় ভুগছেন, তাঁর সঙ্গে একটু গল্প করা, তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতেই পারে। মানসিক রোগী মানেই তিনি অবহেলার পাত্র কিংবা তাঁকে গোপন করে রাখার মানসিকতা দূর করার কথাও উঠে আসে আলোচনায়।

ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকাংশেই অবহেলিত। প্রাপ্তমনস্করাই মনোরোগের শিকার হতে পারেন, এ ধারণাই বদ্ধমূল। কিন্তু বর্তমানে একটি আট-দশ বছর বয়সের শিশুরও মনোজগৎ সময়ের আগেই বদলে যাচ্ছে। প্রি-টিনএজারদের (৮-১২ বছর) ভাবনা-চিন্তায়, আচার-আচরণে এমন অনেক কিছু থাকে, যা গুরুত্ব দিয়ে বোঝা জরুরি। ওই বয়সের ভয়, উদ্বেগ, মানসিক চাপের বিষয়গুলি এড়িয়েই চলা হয় অনেক ক্ষেত্রে। তাই তাদের মনের পৃথিবীটা বোধা দরকার। শুধু কাউন্সেলিং নয়, স্নেহের পরশও সেখানে জরুরি।

মনের অসুখ মানেই মস্তিষ্কের বিকৃতি, এই ভ্রান্ত ধারণাটি ভেঙে বেড়িয়ে আসার বার্তাই দিল 'সমীক্ষণী'। সচেতনতা আর 'স্টিগমা' আলাদা জিনিস। অনেকেই মানতে পারেন না, তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। অনেকে আবার নিজের মানসিক অসুস্থতার কথা প্রকাশ্যে আনতে চান না, কারণ তাতে সমাজ ও পরিবারের কাছে তাঁর মনের দুর্বল দিকগুলি প্রকাশ পেয়ে যাবে। চারপাশের মানুষজন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করে দেবেন। কেউ ভাববেন, মস্তিষ্কের বিকার। মনের অসুখের শিকর যে চারপাশের পরিস্থিতি ও সম্পর্কগুলিতেই নিহিত রয়েছে, সেটি বিষয়টিকেই সামনে আনার পথ দেখালেন চিকিৎসকেরা। গোড়ায় গলদ ধরা গেলেই তাকে শুধরোনোর পথটা অনেক সহজ ও কার্যকরী হবে।

mental health cure Mental Illness Mental disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy