রোগ নেই অথচ শরীরও ভাল নেই। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মনের। আক্রান্ত মানুষটি ভাবতে থাকেন তিনি অক্ষম হয়ে যাচ্ছেন। অবসাদে ডুবে যান অনেকেই। আসলে রোগ নয়, রোগের উপসর্গই নাজেহাল করে দিতে পারে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম ‘ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম’। সংক্ষেপে সিএফএস। সমস্যাটি নিয়ে এখন বিশ্ব জুড়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। বিশেষ করে অতিমারি পর্বের পরে সিএফএস-এর সমস্যা বেড়েছে।
ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম কী?
তীব্র ক্লান্তি ভাব। এই ক্লান্তি সহজে যাবে না। যতই ঘুমোন বা বিশ্রাম নিন, ক্লান্তি-ঝিমুনি দূর হবে না। সিএফএস হলে শরীর ক্রমশ তার তরতাজা ভাব হারিয়ে ফেলে। সারা দিন মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তি, ঘুমঘুম ভাব থাকে। গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণাও ভোগায়। সমস্যাটি ক্রনিক, তাই দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে হয়। এই সমস্যা শয্যাশায়ী পর্যন্ত করে দিতে পারে, ফলে বাড়ি-অফিস সর্বত্র কাজকর্ম ব্যাহত হয়। অথচ কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই সমস্যা ধরা পড়ে না।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোমের কিছু উপসর্গ খুব জোরালো, যেমন, অল্প কাজ করে প্রবল পরিশ্রান্ত মনে হওয়া, শরীরচর্চার পরে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, শরীরের গ্রন্থিগুলি ফুলে ওঠা এবং এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও তরতাজা না হওয়া। অনেকের ক্ষেত্রে আবার মানসিক সমস্যা, যেমন স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনঃসংযোগে ঘাটতি, চড়া আলো বা অতিরিক্ত শব্দ অসহনীয় মনে হওয়া, মাথা যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা, সব সময়ে গা গোলানো, বমি ভাব ইত্যাদির সমস্যাও হতে পারে। দেখা গিয়েছে, ক্লান্তির এই রোগ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা হলে বাতের মতো ব্যথাবেদনাও শুরু হয়। যন্ত্রণার উপসর্গে মনে হতে পারে হয়তো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিয়োপোরোসিস হয়েছে, অথচ পরীক্ষা করলে তা ধরা পড়বে না।
নতুন রক্ত পরীক্ষা কতটা কার্যকরী?
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়া ও অক্সফোর্ড বায়োডায়ানামিক্সের গবেষকেরা নতুন এক রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন, যাতে ‘ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম’ ধরা পড়বে বলে দাবি করা হয়েছে। পরীক্ষাটির নাম ‘এপিসুইচ ৩ডি জিনোমিক রেগুলেটরি ইমিউনো-জেনেটিক প্রোফাইলিং’। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ক্রনিক ফেটিগ সিনড্রোম রোগটি জিনগত ভাবেও ছড়ায়। কাজেই জিনগত বিন্যাস পরীক্ষা করে রোগটি সম্পর্কে আভাস পাওয়া যেতে পারে। নতুন রক্ত পরীক্ষায় সেটিই করার চেষ্টা হচ্ছে। এতে শরীরের ভিতরে কোনও বিরল রোগ বাসা বেঁধেছে কি না, তা-ও ধরা পড়বে। যদিও পরীক্ষাটি গবেষণার স্তরেই রয়েছে। বহু জনের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তবেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।