চামড়া ভেদ করে ছুরিকাঁচি চালানোর তেমন প্রয়োজন হবে না। কাটাছেঁড়ার যন্ত্রণাও সইতে হবে না রোগীকে। শরীরের যে অংশে রোগ হয়েছে, শুধু সেখানে ওষুধ পৌঁছে দিতে এক ধরনের রোবট তৈরি করে ফেলেছেন গবেষকেরা। ছোট্ট ছোট্ট রোবট ওষুধ পিঠে নিয়ে পৌঁছে যাবে কোষে কোষে। যেখানে দরকার সেখানে ঢেলে দিয়ে আসবে। রোগ সারাতে নতুন এক পন্থা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
‘দ্য নেচার’ ও ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক গবেষণাপত্রে মাইক্রোরোবটের কথা লেখা হয়েছে। গবেষণাটি চালাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। প্রাথমিক ভাবে ‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজ়িজ়’ সারাতে খুদে রোবটের প্রয়োগ করে দেখছেন গবেষকেরা। আপাতত শূকরের শরীরে পরীক্ষা হয়েছে। শূকরের অন্ত্রে রোবটদের পাঠিয়ে দেখা হচ্ছে, তারা নির্ভুল লক্ষ্যে ওষুধ পৌঁছে দিতে পারছে কি না।
খুদে রোবটেরা চলবে রিমোট কন্ট্রোলে। তাদের দু’টি পিঠ। একটি পিঠে থাকবে জেল, যাতে ওষুধ ভরে দেওয়া হবে। অন্য পিঠে থাকবে চুম্বক, যা তাদের রাস্তা দেখাবে এবং বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করবে। মানুষের শরীরে রোবটদের চালনা করতে হলে ক্যাথিটারের মাধ্যমে করতে হবে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, খুদে রোবটের পিঠে ওষুধ ভরে দিয়ে যদি ক্যাথিটার দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তারা দিব্যি নড়েচড়ে গিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। রাস্তা দেখানোর জন্য রিমো্ট থাকবে চিকিৎসকদের হাতে। রোগের জায়গায় গিয়ে তারা জেলের বোঝা নামাবে পিঠ থেকে। জেল গলিয়ে ওষুধ ঢেলে দেবে সেই জায়গায়। কাজ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসবে ক্যাথিটারের জায়গায়। তাদের বার করে নেবেন গবেষকেরা।
আরও পড়ুন:
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়োসায়েন্স বিভাগের গবেষক মলি স্টিভেনস জানিয়েছেন, এমন অনেক ব্যাধি থাকে, যেখানে রোগীর শরীরে কাটাছেঁড়া করা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। হাঁটুতে ব্যথা বা হাড়ে টিউমার ধরা পড়ার পড়ে সেই জায়গায় গিয়ে ছুরিকাঁচি চালানো সব সময়ে সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে খুদে রোবটদের গিয়ে কাজ হবে দ্রুত। রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকবে না।
রোবটগুলি আকারে খুবই ক্ষুদ্র। ০.২ মিলিমিটারের কাছাকাছি। তাদের মধ্যে সরু চ্যানেলের মারফত জেল ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। তা আবার আর পাঁচটি জেলের মতো নয়। সেগুলি এক ধরনের ত্রিমাত্রিক পলিমার, যা ছোট ছোট পেপটাইড দিয়ে তৈরি। প্রোটিনের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হল পেপটাইড। সেই পেপটাইড দিয়েই তৈরি হয়েছে হাইড্রোজেল। এর মধ্যে জলীয় ভাবই বেশি। সহজ করে বললে, থকথকে জেলির মতো। এর হাইড্রোজেল খুব নরম বস্তু, তরলও নয় আবার শক্তও নয়। এর ভিতরে পলিমারের নেটওয়ার্ক আছে। জেলের ভিতর ওষুধ ভরে দিলে ওই নেটওয়ার্কের জালিতে গিয়ে ওষুধটি সেঁটে যাবে। শক্ত করে আটকে বসবে, বাইরে বেরোবে না। এই জেলের ভিতরে আবার ছোট ছোট চুম্বকীয় কণা ভরে দেওয়া হবে। এমন ভাবে রোবটটি তৈরি হচ্ছে, যাতে সেটি সঠিক জায়গায় গিয়ে জেল থেকে ওষুধ বার করে ঢালতে পারে। কাজ হয়ে গেলে রাস্তা চিনে ফিরে আসার জন্য সাহায্য করবে ওই চুম্বকীয় কণাগুলি।
জেল ভরা খুদে রোবট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এই গবেষণা সফল হলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিও সারানো যাবে বলে দাবি গবেষকদের।