রসনাতৃপ্তির জন্য খাবারের অভাব নেই। ভাজাভুজি থেকে জাঙ্ক ফুড, চাইনিজ় থেকে মোগলাই, আইসক্রিম থেকে মিষ্টি— আহা কী স্বাদ! এই স্বাদে পেটপুজো করতে গিয়ে যে নিঃশব্দে ক্ষতি হচ্ছে, তা টের পাচ্ছেন কি?
চিকেন নাগেট্স দেখলে লোভ সামলানো যায় না। কিনে এনে বাড়িতে ভেজে খেলেই হল। তেমনই ইনস্ট্যান্ট নুড্লস। এমন খাবারের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। ‘রেডি-টু ইট’ এমন কিছু খাবার আছে, যা প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই মাসে একবার হলেও আসে। এখনকার কর্মব্যস্ততায় রান্নাঘরে বেশি সময় নষ্ট করতে চান না কেউই। তাই এমন খাবারের চাহিদা বাড়ছে। তা ছাড়া পিৎজ়া, বার্গার বা সালামির মতো খাবার তো রয়েছেই। এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যাকে বলা হয় ‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’, তা যেমন লিভারের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই এ সব খাবার থেকে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকিও। কোলন বা মলাশয়ের ক্যানসারের হার এখন ঊর্ধ্বগামী। বিশেষ করে অল্পবয়সিদের একটা বড় অংশের মধ্যে এই ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে।
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, বেশির ভাগেরই খুব প্রিয় এমন কিছু খাবার থেকেই কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
কোন সাত খাবার বিপজ্জনক?
প্রক্রিয়াজাত মাংস
হট ডগ, সসেজ, সালামি, বেকনের মতো খাবারে এমন ধরনের প্রিজ়ারভেটিভ থাকে যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এই খাবার দীর্ঘ দিন সংরক্ষণের জন্য মেশানো হয় নাইট্রাইট। এই রাসায়নিক যদি বেশি পরিমাণে শরীরে ঢোকে, তা হলে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে, ক্ষতি হয় লিভারেরও। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস যাঁরা প্রতি সপ্তাহে বেশি পরিমাণে খান, তাঁদের মলাশয়ে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
ফ্রোজ়েন ফুড
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খাবারকে মানুষের কাছে সহজপ্রাপ্য করে তুলেছে ফ্রোজ়েন ফুড। কলকাতায় বসেই বেরির স্বাদ, বারো মাস কড়াইশুঁটি, ভুট্টার স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রোজ়েন মাংস, মাছ বা পনির কিনে এনে রান্না করে নিলেই হল। আলাদা করে ম্যারিনেট করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে ফ্রোজ়েন ফুডে অনেক সময়েই এমন প্রিজ়ারভেটিভ ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য ভাল নয়। যেহেতু শূন্য ডিগ্রির নীচে স্টোর করা হয় খাবার, তাই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। বেশি এমন খাবার খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।
আরও পড়ুন:
ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল
সকালে অফিসের বেরোনোর তাড়ায় ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল অনেকেরই পছন্দের জলখাবার। নানা রকম ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল পাওয়া যায় যাতে এত বেশি পরিমাণে চিনি থাকে যা কেবল ক্ষতিকারকই নয়, মেদবৃদ্ধিরও কারণ। এতে ফাইবার খুব কম পরিমাণে থাকে, বেশি থাকে কৃত্রিম চিনি যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ইনস্ট্যান্ট ন্যুডল্স, স্যুপ
ইনস্ট্যান্ট ন্যুডল্স বা স্যুপ এখন ছোটরাও পছন্দ করে। তাড়াহুড়োয় অনেক অভিভাবকই এমন ন্যুডল্স বা স্যুপ বানিয়ে ছোটদের খাওয়ান। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্যাকেটের গায়ে যতই স্বাস্থ্যকর লেখা থাক না কেন, ইনস্ট্যান্ট কোনও খাবারই পুষ্টিকর নয়। এতে বেশি পরিমাণে থাকে হাইড্রোজেনেটেড অয়েল, স্টার্চ, প্রিজ়ারভেটিভ যেগুলি ক্ষতিকর। রোজ খেতে থাকলে অন্ত্রে খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যাও বাড়বে, ফলে হজমশক্তি অনেক কমে যাবে।
ফ্লেভার্ড ইয়োগার্ট
প্যাকেটের দই পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে তৈরি হয়। ফলে এর মধ্যে ল্যাক্টোব্যাসিলি ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাক্টেরিয়াই প্রোবায়োটিকের যোগান দেয় শরীরে। এই ধরনের দইতে এমন রং ও রাসায়নিক মেশানো হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
মিষ্টি পানীয়
শুধু নরম পানীয়, সোডা নয় বাজারচলতি এনার্জি ড্রিঙ্কও ক্ষতিকর। গবেষকেরা দেখেছেন, নিয়মিত এমন পানীয় খেলে তা রক্তে শর্করা বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের পানীয় ‘মেটাবলিক সিনড্রোম’-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, ফলে যেমন মেদবৃদ্ধি হয়, তেমনই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
প্যাকেটজাত বেকারি ও দুগ্ধজাত খাবার
প্যাকেটজাত মিষ্টি পাউরুটি, দুগ্ধজাত নানা খাবারে এত বেশি পরিমাণে প্রিজ়ারভেটিভ থাকে যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের খাবারে ফাইবার কম, রাসায়নিক বেশি থাকে যা অন্ত্রে প্রদাহের কারণ হতে পারে। রোজ এমন খাবার খেলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের ঝুঁকিও বাড়বে।