স্কুল থেকে ফিরেই ঝিমিয়ে পড়ছে। খেতে চাইছে না। ঘুম থেকে ওঠার সময়ে নিদারুণ মাথাযন্ত্রণা। মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্টও ভোগাচ্ছে। শিশুর এমন অনেক লক্ষণই এড়িয়ে চলেন বাবা-মায়েরা। সাধারণ জ্বর বা অ্যালার্জির সমস্যা ভেবে বসেন। অথচ এর কোনওটিই সাধারণ অসুখবিসুখের উপসর্গ নয়। কম বয়সেই যদি হাঁপ ধরা বা মাথাঘোরা, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা ভোগাতে শুরু করে, তা হলে বুঝতে হবে, রক্তচাপের গোলমাল হচ্ছে। ছোটদেরও যে উচ্চ রক্তচাপের রোগ হতে পারে, তা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেক বাবা-মায়েরই। তাই এর চিকিৎসাও হয় না সঠিক সময়ে। অথচ ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে, শিশু ও বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা দীর্ঘ সময় ধরেই সমীক্ষা চালাচ্ছেন এ বিষয়ে। দেখা গিয়েছে, ২০০০ সালে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত শিশু ও কমবয়সির সংখ্যা ছিল বিশ্বে ৩ শতাংশের কম। ২০২০ সালের পর থেকে তা বেড়ে ৮ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। সমীক্ষা বলছে, ২১টি দেশের সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি শিশু উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এই তালিকায় ভারতও রয়েছে।
আরও পড়ুন:
শিশুদের রক্তচাপ কেন বাড়ছে?
অত্যধিক হারে বাইরের খাবার খাওয়া, বাড়তি ওজন, উচ্চ রক্তচাপের মতো গুরুতর সমস্যা ডেকে আনছে। বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা এবং মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়া— এই দুইয়ের কারণে শিশুদের মধ্যে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা। শিশুরা এখন মোবাইলেই খেলার মাঠ খুঁজে নিচ্ছে। এতে শুধু শিশুর মানসিক নয়, সার্বিক বিকাশ বাধা পাচ্ছে। নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলো না করার ফলে তার প্রভাব পড়ছে শরীরেও। এ সব কারণে ওজনও বাড়ছে ক্রমাগত। স্থূলতার হাত ধরেই জন্ম নিচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। গবেষণা বলছে, এতে ৬-১৬ বছর বয়সিরা ভুগছে বেশি। কম বয়স থেকেই যদি শিশু উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে, তা হলে পরবর্তীতে হৃদ্রোগের আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়।
বাবা-মায়েদের জন্য পরামর্শ
শিশুর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েটের সঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। প্রতি দিন অন্ততপক্ষে ৬০ মিনিট শারীরিক কসরত করা জরুরি।
ফল, সব্জি, দানাশস্যের মতো খাবার রাখতে হবে রোজের ডায়েটে। রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণিজ প্রোটিন খেতে হবে। তবে, তা যেন ফ্যাট-বর্জিত হয়।
পিৎজ়া, বার্গার, সসেজ, সালামির মতো খাবার শিশুকে রোজ খেতে দেবেন না। খুব বায়না করলে সপ্তাহে এক দিন দিতে পারেন। তা-ও অল্প পরিমাণে।
বিছানায় শুয়ে-বসে কাটানোর অভ্যাস একেবারে ত্যাগ করতে হবে। একটানা মোবাইল, ল্যাপটপ বা টেলিভিশন দেখার অভ্যাসও কিন্তু রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
শিশুর ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। বয়সের তুলনায় ওজন বেশি বেড়ে গেলেই সতর্ক হতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে শিশুর ডায়েট ঠিক করুন। মাঠে বা পার্কে নিয়ে গিয়ে খেলাধুলো করানোর চেষ্টা করুন, এতে শরীর ভাল থাকবে।
উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে খাবারে নুনের পরিমাণ বেশি রাখা চলবে না। ডায়াবিটিসে আক্রান্ত বাচ্চার ক্ষেত্রে হাইপারটেনশন জটিল হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সুগারও।
ওজন বৃদ্ধির কারণেই যে রক্তচাপের সমস্যা হবে তা না-ও হতে পারে। তাই শিশুর রক্তচাপের হেরফের কেন হচ্ছে, সে কারণ আগে জানা জরুরি। অনেক সময়ে দেখা যায়, কিডনির অসুখের কারণেই রক্তচাপ বাড়ছে। তাই কারণটি আগে খুঁজে সেইমতো চিকিৎসকরা দেখে নেন শিশুর ওষুধের প্রয়োজনআছে কি না, অথবা কত দিন চিকিৎসা চলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।