ঝকঝকে হাসি কার না চাই? একগাল হেসে মন জয় করে নিতে পারেন সহজেই। আবার হাসি থেকেই ধরা পড়তে পারে জটিল সব রোগ। মুখের চওড়া হাসির অনেক গুণ। হাসি দেখে ধরা যাবে রোগ, এমনটাই দাবি গবেষকদের। তবে শুধু হাসি দেখে নয়, হাসার সময়ে যে দাঁতের পাটি ও মাড়ি দৃশ্যমান হবে, তা দেখেই নাকি ধরা যাবে প্রায় সাত রকম রোগ। আর যে সে রোগ নয়। হার্টের অসুখ, কিডনির রোগ থেকে শুরু করে হাড়ের রোগ, রক্তাল্পতা, গ্যাস-অম্বল থেকে সংক্রামক রোগও পড়ছে তার মধ্যে।
হাসি দেখে কী ভাবে ধরা পড়বে রোগ?
হলদেটে ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের উপরিস্তরে থাকা এনামেল নামক স্তরটির ক্ষয় হতে থাকে। এর ফলে দাঁতের নীচের স্তরে থাকা ডেন্টিন উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এই স্তরটির রং কিছুটা হলদেটে। ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের দাঁতের রং ধবধবে সাদার বদলে কিছুটা বিবর্ণ বা হলদেটে হয়। এই হলদেটে ছোপ যদি বেশি মাত্রায় হয়, তা হলে বুঝতে হবে হজমের গোলমাল মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড উপরে উঠে আসছে, যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণ হতে পারে। আবার লিভারের সমস্যা হলেও দাঁতে এমন ছোপ ধরবে।
সাদাটে বিবর্ণ মাড়ি
মাড়ির রং হালকা গোলাপি বা লালচে হয়। যদি দেখেন, মাড়ির রং সাদাটে বা অত্যধিক বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে, তা হলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। অনেক সময়ে রক্তে হিমোগ্লাবিনের মাত্রা খুব কমে গেলে বা রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দিলে মাড়ির রঙে এমন বদল আসে।
আরও পড়ুন:
মাড়ি ফোলা, মুখে দুর্গন্ধ
ফুলে লাল হয়ে ওঠ মাড়ি, দাঁতে শিরশিরে ভাব এবংমুখে কটু গন্ধ কেবল পেটের রোগের ইঙ্গিত দেয় না, আরও কিছু রোগের কারণেও এমন হতে পারে। যেমন— ডায়াবিটিস। রক্তে শর্করার মাত্রা অত্য়ধিক বেড়ে গেলে মাড়ি থেকে রক্ত বেরোনো, মাড়ি ফুলে ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেয়। মাড়িতে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হলেও এমন হয়। সে ক্ষেত্রে মাড়ির প্রদাহ হার্টের ক্ষতি করতে পারে। হাড়ের ঘনত্ব কমার কারণে দাঁতের গোড়ার হাড় ক্ষয়ে যেতে পারে, যার ফলে দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায়। এটি অস্টিয়োপোরোসিসেরও লক্ষণ হতে পারে।
মাড়িতে জ্বালা, প্রদাহ
দাঁত মাজার পরেও মাড়িতে জ্বালা ভাব, ব্যথা, দাঁতের গোড়ায় সংক্রমণ কিডনির রোগের লক্ষণ হতে পারে। দাঁতের কোনায় বা মাড়িতে জন্মানো ব্যাক্টেরিয়া রক্তপ্রবাহে মিশে যায়, যা কিডনির কোষগুলির ক্ষয় ঘটাতে থাকে। মাড়ির রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে তা থেকে কিডনির রোগ হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।
মুখের ঘা, ক্ষত বা সাদা দাগ
মুখের ভিতরের অংশে সাদা বা লালচে দাগ, ঘা, ক্ষত সহজে সারতে না চাইলে সাবধান হতে হবে। ভিটামিন বি১২, ফোলেট বা আয়রনের অভাবজনিত কারণে মুখে ঘা বা জিভে প্রদাহ হতে পারে। ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ নামক অন্ত্রের রোগের কারণে জিভে ঘা বা আলসার হতে পারে। আবার এড্স রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে গেলে মুখের ভিতরে নানা রকম সংক্রমণ ঘটতে দেখা যায়।
ঠোঁটের কোনায় ঘা
ঠোঁটের কোনায় ঘা বা ঠোঁটের কোণ চিরে যাওয়া ভিটামিন বি ও আয়রনের ঘাটতির অন্যতম কারণ। এই রোগকে বলে অ্যাঙ্গুলার চিলাইটিস। রক্তাল্পতা হলে এমন উপসর্গ দেখা দেয়। আবার শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ হলেও এই সমস্যার সূত্রপাত হয়।
দাঁতের রং ধূসর বা কালো
দাঁতের রং বদলে ধূসর, বাদামি বা কালো হতে শুরু করলে বুঝতে হবে, কিডনি ভাল নেই। কিডনির জটিল অসুখ ধরা পড়ার আগে এমন লক্ষণ অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা দেয়।