ডায়াবিটিসের নতুন চিকিৎসা এল। ছবি: সংগৃহীত।
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না, এত দিন এই ধারণাই ছিল। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে রোগীর অবস্থা বুঝে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনই দিতেন চিকিৎসকরা। কিন্তু বিশ্বে প্রথম বার এক রোগীর ডায়াবিটিস সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তুললেন চিনের একদল গবেষক-চিকিৎসক। তাঁদের দাবি, ডায়াবিটিস নির্মূল হওয়ার বছর দুয়েক অবধি কোনও ইনসুলিন বা ওষুধ খেতে হয়নি রোগীকে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রাও বিন্দুমাত্র ওঠানামা করেনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে এই নতুন গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। সাংহাই চ্যাংঝেং হাসপাতালের চিকিৎসক ইন হাও এবং তাঁর টিম ডায়াবিটিস সারানোর নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেছেন। মুখ্য গবেষক ইন ও তাঁর সহকারী কিফার দাবি করেছেন, নতুন উপায়ে কোষ প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে ডায়াবিটিস সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
কিফার বলছেন, ২০২১ সালে এক রোগী ডায়াবিটিসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। তাঁর কিডনির অবস্থাও ভাল ছিল না। টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ছিলেন সেই ব্যক্তি। ইনসুলিনও কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল। সেই সময় ‘আইলেট কোষ’ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা।
আইলেট হল অনেকগুলো কোষের সমষ্টি। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে থাকে এই কোষপুঞ্জ। তিন রকম আইলেট কোষ আছে আমাদের শরীরে—আলফা, বিটা এবং ডেল্টা। আইলেট কোষপুঞ্জে আলফা কোষ থাকে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং বিটা থাকে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ। এই বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন বলে একটি হরমোন বের হয়। বিশেষ করে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় লিভারের মাধ্যমে। সেই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে ইনসুলিন। আর আলফা কোষে থাকে গ্লুকাগন। এই গ্লুকাগন লিভারের মধ্যে গ্লুকোজকে ভেঙে তাকে জারিত করে। তখন শক্তি তৈরি হয়। যদি আইলেট কোষপুঞ্জ নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে এই গোটা প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হয়। তখন গ্লুকোজ জারিত হতে না পেরে কোষে জমতে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবিটিস হয়। চিকিৎসকেরা তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন দিয়ে অথবা ওষুধ খাইয়ে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।
চিনা গবেষকরা, এই প্রক্রিয়াটাই শরীরের ভিতরে নতুন করে তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা বিশেষ উপায় নতুন করে অগ্ন্যাশয়ে আইলেট কোষপুঞ্জ প্রতিস্থাপন করছেন। পুরনো কোষ সরিয়ে নতুন কোষ প্রতিস্থাপন করছেন যাতে গোটা চক্রটা আবার শুরু হতে পারে। শরীর নিজে থেকেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে। বাইরে থেকে যাতে আর ইনসুলিন দেওয়ার দরকার না পড়ে।
এই গবেষণা এত দিন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। প্রথম বার এক জন রোগীর উপর প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া গেছে বলে দাবি। চিনা গবেষকরা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ডায়াবিটিস নির্মূল করাই তাঁদের আসল লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy