মাত্র ৪২ বছর বয়সে জীবনাবসান শেফালী জরীওয়ালার। বার্ধক্য ঠেকানোর চিকিৎসা করিয়ে, পরামর্শ ছাড়া নানাবিধ ওষুধ খেয়ে, খাবারে বিষক্রিয়া হয়ে, না কি উপবাসের ফলে রক্তচাপ নেমে যাওয়ার ফলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে, কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে ‘বিগ বস’ তারকার, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। তবে ময়নাতদন্তের সামগ্রিক রিপোর্ট প্রকাশের ২-৩ দিন আগে তদন্তকারীরা যতটুকু আন্দাজ করছেন, সত্যনারায়ণ পুজোর জন্য সারা দিন উপবাসের পর অ্যান্টি-এজিং ইঞ্জেকশন নেওয়ার ফলে এক ধাক্কায় রক্তচাপ কমে যায়, তাতেই হার্টে চাপ পড়ে হদ্রোগ। চার দিকে দুশ্চিন্তা, আতঙ্কের আবহ। প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ যদি মুহূর্তের মধ্যে অনেকটা রক্তচাপ নেমে যায়, তাতে কি এক এক লহমায় মৃত্যু হতে পারে?
হঠাৎ অনেকটা রক্তচাপ কমে যাওয়াকে ‘হাইপোটেনশন’ বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপের তুলনায় নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে মানুষ কম ভাবিত হন। তবে এটি সমান বিপজ্জনক হতে পারে বলেই দাবি চিকিৎসকদের। ব্লাড প্রেশার হুট করে দ্রুত ৯০/৬০-এর নীচে নেমে গেলে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছোয় না। এর ফলে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়, যেখানে শরীরের সংবহনতন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। সেই মুহূর্তে চিকিৎসা না করালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
কী কী কারণে দ্রুত রক্তচাপ নেমে যেতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।
তবে মধুমেহ চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক যে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে। কারণ আমাদের শরীর এমন একটি হোমিয়োস্ট্যাটিক মেকানিজ়ম নিয়ে তৈরি, যা নিজে থেকেই উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের প্রভাব সামাল দিতে সক্ষম। কম রক্তচাপ হঠাৎ মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটাতে পারে, তবে শুধুমাত্র রক্তচাপ নেমে যাওয়ায় মৃত্যু হয় না। যদি না আগে থেকেই হার্টের সমস্যা বা সেপসিস অথবা সংক্রমণজনিত জটিলতা থাকে।’’
কী কী কারণে দ্রুত রক্তচাপ নেমে যেতে পারে?
শরীরে জলশূন্যতা
অভ্যন্তরীণ রক্তপাত
হৃদ্রোগের সমস্যা
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
আরও পড়ুন:
শেফালীর ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল?
একাধিক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার সারা দিন পুজো উপলক্ষে উপবাস করেছিলেন। তার পর সন্ধ্যায় গ্লুটাথায়োনের অ্যান্টি-এজিং ইঞ্জেকশন নেন, এবং তার পরে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা খাবার বার করে সরাসরি খেয়ে নেন।
অভিজ্ঞান মাঝির কথায়, ‘‘শেফালি জরীওয়ালার ক্ষেত্রে যা ঘটতে পারে তা হল, উপবাসের কারণে হাইপোগ্লাইসেমিক (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) অবস্থা তৈরি হয়েছিল, অথবা কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া (হার্টের অনিয়মিত স্পন্দন) হয়েছিল। কারণ শুনেছি, শেফালী নাকি অ্যান্টি-এজিং ওষুধ খেতেন, যেগুলো স্টেরয়েড বা ভিটামিন জাতীয় হতে পারে। দীর্ঘ দিন এগুলো খাওয়া একেবারে নিরাপদ নয়। তা ছাড়া এগুলোর অনেক অজানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন, হঠাৎ হৃদ্যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যু। স্রেফ রক্তচাপ কমে যাওয়ায় মৃত্যু খুবই বিরল ঘটনা, তবে তা একেবারে অসম্ভব নয়। বিরল জিনিস সাধারণত বিরল ভাবেই ঘটে।’’
উপরন্তু যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁরা যদি সারা দিন উপবাস করার পর হঠাৎ খাবার খান, বিশেষ করে ঠান্ডা খাবার, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপের মাত্রা নেমে গিয়ে জ্ঞান হারাতে পারেন। একে ‘ভ্যাসোভ্যাগাল অ্যাটাক’ বলা হয়।