ডায়াবিটিস হলে কী করণীয়, কোনটা করা যায় না, তা নিয়ে যথেষ্ট চর্চা চলে। কিন্তু আপনারও যে ডায়াবিটিস হতে পারে, বা হয়েছে, তা বুঝবেন কী করে?
ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি বলছেন, ‘‘এমন অনেক উপসর্গ থাকে, যা ডায়াবিটিসের ইঙ্গিতবাহী। চট করে সে সবকে ডায়াবিটিসের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা যায় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, অসুখের আসল কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া।’’
ঘন ঘন প্রস্রাব এবং কেটে গেলে ঘা শুকোতে না চাওয়া, ক্লান্তি— এগুলিকে ডায়াবিটিস হওয়ার পূর্বলক্ষণ বলে ধরা হয়। কিন্তু আর কোন উপসর্গ নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?
আচমকা ওজন কমে যাওয়া: হঠাৎ করে ওজন কমে যাচ্ছে, আর এতেই খুশি হচ্ছেন? আচমকা অনেকটা ওজন কমার নানা কারণ থাকতে পারে। তবে তা ডায়াবিটিসের পূর্বলক্ষণও হতে পারে, মত চিকিৎসকের। ডায়াবিটিস হলে, কোষ শর্করাকে ঠিকমতো ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। ফলে, শরীর জমে থাকা মেদকে কাজে লাগাতে শুরু করে। যার ফলে কখনও কারও কারও ওজন কমে যায়।
ঋতুস্রাবের সমস্যা: অনিয়মিত ঋতুস্রাব, পিসিওএস-এর (পলিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম) মতো সমস্যা থাকলেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কখনও কখনও অনিয়মিত ঋতুস্রাবের পিছনের ডায়াবিটিসের ভূমিকা থাকে, জানাচ্ছেন অভিজ্ঞান। পিসিওএস টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পিসিওএস-এর ফলে ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্স তৈরি হয় অনেক সময়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রস্রাবে সংক্রমণ: প্রস্রাবে সংক্রমণ মহিলাদের খুব সাধারণ একটি সমস্যা। তবে ওষুধ খাওয়ার পরেও তা সারতে না চাইলে বা ফিরে এলে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে ব্যাক্টেরিয়ায় বাড়বৃদ্ধি হয়, তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ: যোনিপথে বা যৌনাঙ্গে ছত্রাকঘটিত সংক্রমণের হারও বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসার পরেও যদি এমন সমস্যা বার বার হয়। সাদা স্রাব হতে থাকে, যোনিপথে অস্বস্তি, চুলকানি হয়, শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
ত্বকের বর্ণ: কারও কারও ত্বকের বর্ণেও কিছু বদল হয়। ত্বক আচমকা জেল্লা হারালে, ঘাড়ে, গলায়, বাহুমূলে কালচে ছোপ দেখা দিলেও সতর্ক হওয়া দরকার। ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বেশি হলে তা ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। হরমোন শরীরের ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে এমন হয়।
চিকিৎসক অভিজ্ঞান বলছেন, ‘‘মেটাবলিক সিন্ড্রোম থাকলে ডায়াবিটিস নিয়ে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। শরীরের বিভিন্ন উপাদানের নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। তার হেরফের হলে সমস্যা হয়। রক্তচাপ বেশি থাকলে, ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে গেলে তা অনেক রকম ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। স্থূলত্ব,শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, জিনগত নানা কারণে মেটাবলিক সিন্ড্রোম হয়, যা টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’’