Advertisement
E-Paper

গাড়িতে উঠলেই বমি পায়? শব্দেই হতে পারে সমস্যার সমাধান! কী বলছে গবেষণা?

বাস, ট্যাক্সি, ক্যাব-চড়লেই গা বমি ভাব, শরীরে প্রবল অস্বস্তি, তার পর বমি। চিকিৎসকেরা একেই বলেন ‘মোশন সিকেনস’ বা গতিজনিত অসুস্থতা। শব্দের সাহায্যে কষ্ট থেকে মুক্তি সম্ভব বলছে গবেষণা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:১০
গাড়িতে উঠলেই বমি পায়, কষ্ট হয়? সমস্যার সমাধান হবে শব্দেই?

গাড়িতে উঠলেই বমি পায়, কষ্ট হয়? সমস্যার সমাধান হবে শব্দেই? ছবি:ফ্রিপিক।

রেস্তরাঁ থেকে ভরপেট খেয়ে গাড়িতে উঠলেন। এসি-র ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর জুড়োনো দূরের কথা। গাড়ি চলতে না চলতেই গা-পাক দিয়ে উঠল। এমন সমস্যা হয় অনেকেরই। বাস, ট্যাক্সি, ক্যাব-চড়লেই গা বমি ভাব, শরীরে প্রবল অস্বস্তি, তার পর বমি। চিকিৎসকেরা একেই বলেন ‘মোশন সিকেনস’ বা গতিজনিত অসুস্থতা।

যাঁদের এই সমস্যা রয়েছে তাঁরা জানেন, ওষুধ খেয়েও তা সব সময় বন্ধ হয় না। পাহাড়ি পাকদণ্ডীতে গাড়িতে উঠলে, উত্তাল সমুদ্রে জাহাজে গেলে, আবার কারও কারও এসি ক্যাবেও মারাত্মক সমস্যা হয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে অন্য ভাবে।

জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকেরা এই বিষয়ে দিশা দেখাচ্ছেন। গবেষণা বলছে, মাত্র ১ মিনিটের বিশেষ শব্দতরঙ্গ কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেই লাভ হবে। দূর হবে শারীরিক অস্বস্তি।

কিন্তু কী ভাবে?

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা দরকার, গতির কারণে অসুস্থতা কেন হয়? চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখ, অন্তঃকর্ণ ও ত্বক— মানুষের শরীরের তিনটি অংশ গতির ভারসাম্য নির্ণয় করে। এই তিনটি অংশকেই ‘সেনসরি রিসেপ্টর’ বলা হয়। এরাই এই গতির অনুভূতিকে পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কে। চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, চোখ, কান ও মস্তিষ্কের সমন্বয় চলাফেরার ও কাজকর্মের জন্য জরুরি। এই সমন্বয়ের কাজটি করে ভেস্টিবিউলার সিস্টেম। কানের ভিতরে থাকে ‘ভেস্টিবিউলার অ্যাপারেটস’। কোনও কারণে এই সমন্বয় বিঘ্নিত হলে ‘মোশন সিকনেস’ হতে পারে। অস্বস্তি হয়। কারও আবার বমি হয়ে যায়।

গতিজনিত অস্বস্তি বা সমস্যা কী ভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে তাকুমি কাগওয়া এবং মাশাই কোটের নেতৃত্বে সমীক্ষা এবং গবেষণা হয়েছে নাগোয়া ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ১০০ হার্ৎজ়ের শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণে গেলে, শরীরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাত্র ১ মিনিটের ‘সাউন্ড স্পাইস’ (বিশেষ ধরনের শব্দকে এই নামেই চিহ্নিত করা হয়েছে) এ ক্ষেত্রে বমি ভাব, শারীরিক অস্বস্তি কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

তাকুমি কাগওয়া বলছেন, ‘‘আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হল, স্বল্প সময়ে কী ভাবে বিশেষ শব্দের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের বিশেষ অংশকে উদ্দীপিত করে গতিজনিত অসুস্থতা কমানো যায়, তা দেখা।’’ তাঁর দাবি, যে বিশেষ শব্দ শোনানো হচ্ছে, তা কান এবং শরীরের জন্য একেবারেই নিরাপদ।

কী ভাবে কাজ করছে শব্দ?

বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে তা কানে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সেই শব্দ উদ্দীপিত করছে অন্তঃকর্ণের ওটোলিথিককে। এটি গতির সঙ্গে শরীর, মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। আসলে বিশেষ শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণের ‘ভেস্টিবিউলার সিস্টেম’-এর উপর প্রভাব ফেলছে। এই সিস্টেম বিগড়ে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়। শব্দ সেই সমন্বয়টাই বজায় রাখতে সাহায্য করছে।

ফলাফলে পৌঁছনোর জন্য বেশ কয়েক জন সেচ্ছাসেবকের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। দোলনায় দুলছেন, গাড়িতে যাচ্ছেন, এমন লোকজনকে বিশেষ শব্দটি শোনানো হয়। ১০০ হার্ৎজ়ের শব্দতরঙ্গ তাঁদের কানে প্রবেশের পর গতিজনিত অসুস্থতা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে ইসিজি করেও দেখা হয়। তাতেই দেখা যায়, বমি ভাব, মাথাব্যথা সংক্রান্ত শারীরিক অস্বস্তি কমে গিয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, আসলে বিশেষ শব্দটি সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলছে। তার ফলেই সেই ব্যক্তি উপকার পাচ্ছেন। এই গবেষণা ফলপ্রসূ হলে, তার যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব মিলবে মনে আশা গবেষকদের। এ নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

Motion sickness Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy