খামখেয়ালি আবহাওয়া রোগ-জীবাণুর বংশবৃদ্ধির অনুকূল। সকালে চড়া রোদ, তো রাতে বৃষ্টি। আবহাওয়ার এমন ভোলবদলের সময়েই ছত্রাকঘটিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকে। অতিরিক্ত আর্দ্রতায় দাদ, হাজা, এগজ়িমা, স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগের প্রকোপ বাড়ে। যদি ত্বকে চুলকানি, র্যাশের সমস্যা দেখা দেয় তা হলে কী ভাবে তা সারবে, জেনে নিন।
বর্ষার সময়ে কী কী ধরনের ত্বকের সংক্রমণ দেখা দেয়?
দাদ বা রিংওয়ার্ম
টিনিয়া কর্পোরিস নামক ছত্রাকের সংক্রমণে দাদ হয় ত্বকে। ত্বকের যে অঞ্চল অধিকাংশ সময়ে ঘেমে থাকে, সেই অঞ্চলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। কাজেই বাহুমূল, ঘাড়, স্তনের নীচের দিক, যৌনাঙ্গ ও কুঁচকিতে সংক্রমণ বেশি ঘটে। শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা ঘাম এবং ধুলোবালিও এর কারণ হতে পারে।
সারবে কী উপায়ে:
১) খুব আঁটসাঁট পোশাক পরা চলবে না, স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম কম ব্যবহার করুন।
২) র্যাশের জায়গায় টি ট্রি অয়েল নারকেল তেলে মিশিয়ে মাখতে পারেন।
৩) অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারেও সমস্যার সমাধান হতে পারে।

বর্ষায় চর্মরোগ থেকে সাবধান। ফাইল চিত্র।
স্ক্যাল্প রিংওয়ার্ম
ছত্রাকের সংক্রমণ হয় মাথার ত্বকেও। টিনিয়া ক্যাপিটিসের সংক্রমণে মাথার ত্বকে ক্ষত, র্যাশ হতে দেখা যায়। এতে মাথার ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে, চুলকানির সমস্যা বাড়ে। ফলে ব্রণ-ফুস্কুড়ি, লালচে র্যাশ দেখা দেয়। মাথার সামনের দিকেও গুটি গুটি র্যাশ বেরোতে থাকে।
সারবে কী উপায়ে:
১) নিয়মিত অ্যান্টিফাঙ্গাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে হবে।
২) ভিজে চুল বেঁধে রাখলে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়বে।
৩) খুব বেশি জেল বা সিরাম মাথায় ব্যবহার না করাই ভাল।
৪) অন্যের চিরুনি, প্রসাধনী, তেল বা ক্রিম ব্যবহার করবেন না। এর থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন:
অ্যাথলেট’স ফুট
ছত্রাকের সংক্রমণ হয় পায়েও। ভিজে মোজা বা জুতো দীর্ঘ সময় পরে থাকলে, অথবা পায়ে ধুলোময়লা পরিষ্কার না করলে সেখানে র্যাশ হতে দেখা যায়। খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটলে, অথবা অন্যের জুতো, মোজা বা তোয়ালে ব্যবহার করলে, তা থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। পায়ের পাতা ফুলে যায়, তাতে লালচে র্যাশ হয়। পায়ের চামড়া শুষ্ক হয়ে গিয়ে মৃতকোষ উঠতে শুরু করে দেয়।
সারবে কী উপায়ে:
১) বাইরে থেকে ফেরার পরে পায়ের পাতা ভাল করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
২) ভেজা পায়ে দীর্ঘ সময়ে থাকবেন না, সবসময়েই শুকনো করে পা মুছে নেবেন।
৩) মোজা নিয়মিত কাচতে হবে।
৪) খালি পায়ে বেশি না হাঁটাই ভাল।
স্ক্যাবিস
সারকপটিস স্ক্যাবি নামক পরজীবীর সংক্রমণে এই ধরনের চর্মরোগ হয়। সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অন্য মানুষেরও রোগটি হয়। সে ক্ষেত্রে এই অণুজীবগুলি ত্বকের একেবারে উপরিস্তরকে আক্রমণ করে এবং চামড়ার মধ্যে গহ্বর তৈরি করে। দু’আঙুলের মাঝখানে, নখের ভাঁজে, বাহুমূলে সংক্রমণ বেশি ঘটে।
সারবে কী উপায়ে:
১) রোগী ও আশপাশের মানুষ প্রত্যেককে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোজ ধোয়া জামাকাপড় পরতে হবে।
২) বর্ষার সময়ে বিছানার চাদর, বালিশের ঢাকনা নিয়মিত পাল্টাতে হবে। বাড়িতে শিশু থাকলে পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলতে হবে।
৩) চুলকানির জায়গায় অ্যালো ভেরা জেল লাগালে আরাম পাওয়া যেতে পারে।