বিশ্বে প্রথম বার শূকরের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হল মানুষের শরীরে। প্রতিস্থাপনের স্থান চিন। ‘নেচার মেডিসিন’ নামক জার্নালে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শূকরের ফুসফুস ব্রেন-ডেড হয়ে যাওয়া এক যুবকের শরীরে সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপিত ফুসফুসটি ৯ দিন ধরে কাজও করেছে। এর আগে ২০২২ সালে আমেরিকার মেরিল্যান্ডে প্রথম শূকরের হৃদ্পিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল মানুষের শরীরে। শূকরের কিডনিও প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের দু’মাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় প্রাপকের।
গুয়াংঝৌ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শূকরের বাঁ দিকের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেন এক যুবকের শরীরে। সেই যুবকের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে থাকে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে শূকরের ফুসফুস সফল ভাবে প্রতিস্থাপিত হয় তাঁর শরীরে। টানা ৯ দিন ধরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ শ্বাসবায়ু গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বার করে দেওয়ার কাজও করে তা। শ্বাসক্রিয়া চালু রাখার জন্য বাইরে থেকে কোনও যন্ত্রের সাহায্যও প্রয়োজন হয়নি।
আরও পড়ুন:
হার্ট, কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের থেকে অনেকটাই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ ফুসফুস প্রতিস্থাপন। অস্ত্রোপচার ঠিকমতো না হলে তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান বা ‘হাইপারঅ্যাকিউট রিজ়েকশন’ হয়ে যায়। অথবা প্রতিস্থাপনের পরেই তরল জমা হতে থাকে ফুসফুসে। এ ক্ষেত্রে ৯ দিন ধরে তেমন কোনও সমস্যাই নাকি দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। কারণ হিসেবে তাঁরা দাবি করেছেন, জিনগত ভাবে পরিবর্তিত শূকরের ফুসফুসের কোষের সঙ্গে মানুষে ফুসফুসের কোষের সাদৃশ্য আনা হয়েছিল। কিছুটা মিল থাকায়, প্রতিস্থাপিত ফুসফুস অন্তত কিছু দিন কার্যক্ষম ছিল। এই সময়টাকে কী ভাবে দীর্ঘমেয়াদি করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে।
মানুষের দেহে কোনও পশুর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করাকে ‘জ়েনোট্রান্সপ্ল্যান্ট’ বলা হয়। জিনগত ভাবে পরিবর্তিত প্রাণীর অঙ্গ মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে এই গবেষণা। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত ত্রুটি, উপযুক্ত দাতার খোঁজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তার পরেও প্রতিস্থাপিত নতুন অঙ্গের কারণে শরীরে প্রদাহ, সংক্রমণ ও প্রত্যাখ্যানের মতো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শূকরের হার্ট ও কিডনি মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন তেমন ভাবে সফল হয়নি, ফুসফুসের ক্ষেত্রে অসাধ্য সাধন সম্ভব কি না, সেটাই দেখার।