দু’দিন অন্তর সর্দি-কাশি। বেশি হাঁটাচলা করলেই হাঁপ ধরা। শীত এলেই শ্বাসের কষ্ট। এমন উপসর্গের সঙ্গে পরিচিত অনেকেই। যাঁদের হাঁপানি রয়েছে বা দীর্ঘ দিন ধরে সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্রনিক অসুখে ভুগছেন, তাঁদের কাছে এই লক্ষণগুলি চেনা। ওষুধ, ইনহেলারের সাহায্যে তা বশে রাখতে হয়।
শুধু হাঁপানি নয়, টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা রোগেও এমন উপসর্গ দেখা দেয়। তবে চিকিৎসকেরা চিন্তিত ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে। বিশ্ব জুড়েই হাঁপানির মতো ফুসফুসের অসুখ বাড়ছে। তবে তার আড়ালেই অনেক সময় লুকিয়ে থাকে ক্যানসারের বীজ। অনেক সাধারণ লক্ষণ না বুঝে এড়িয়ে যান রোগীরা। বুঝতে পারে না রোগীর পরিবারও। আর তাতেই ঘটে বিপদ। ক্যানসারের চিকিৎসা এখন অনেক বেশি ফলপ্রসূ। সময়ে অসুখ চিহ্নিত হলে রোগীর আয়ু বৃদ্ধি করা যায় কয়েক বছর। কখনও কখনও ক্যানসার নিরাময়ও হয়।
আরও পড়ুন:
তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, জরুরি হল সময়ে তা চিহ্নিত হওয়া। আবার মুশকিল হল, যক্ষ্মা বা হাঁপানির উপসর্গের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মিলে যায় ক্যানসারের লক্ষণ। কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন?
শ্বাসের কষ্ট, শ্বাস নেওয়ার সময় সাঁসাঁ আওয়াজ, অল্পেই ক্লান্তি, এ সব যেমন হাঁপানির রোগীদের হয়, তেমনই তা ক্যানসারের পূর্বলক্ষণও হতে পারে। তবে ক্যানসারের ক্ষেত্রে তফাত হবে একটাই, এই উপসর্গগুলি কমতে চাইবে না। ওষুধ খাওয়ার পরে, টানা চিকিৎসায় রোগীর স্বাস্থ্যের উন্নতি না হলে, সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
অসুবিধা কোথায় হয়?
বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। শীতের দিনে ফুসফুসের অসুখের রোগীদের সমস্যা বেড়েও যায়। ফলে সাধারণ উপসর্গগুলি নিয়ে ধন্দ্ব তৈরি হতে পারে। বুকের নির্দিষ্ট অংশে ব্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, ভীষণ রকম ক্লান্তি, শ্বাসের কষ্ট— এগুলি যদি অনেক দিন ধরে চলতে থাকে, চিকিৎসক নানা রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন।
কোন পরীক্ষাগুলির দরকার হতে পারে?
বুকের এক্স রে, সিটি স্ক্যানের সাহায্যে ফুসফুসে কোনও মাংসপিণ্ড তৈরি হলে তা বোঝা যেতে পারে। তবে এতেও যদি রোগ না স্পষ্ট হয়, চিকিৎসক ব্রঙ্কোস্কোপি করার নির্দেশ দিতে পারেন। এতে ফুসফুসের বায়ুচলাচলের জায়গাগুলি সঠিক অবস্থান, সেটি কোন পর্যায়ে রয়েছে তা স্পষ্ট হয়। এই সময় বায়োপসি করে ক্যানসার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করিয়েও চিকিৎসক কিছু অনুমান করতে পারেন। আধুনিক আরও নানা রকম পরীক্ষায় রোগ নির্নয় হতে পারে। সে বিষয়ে নির্দেশিকা দেবেন চিকিৎসকই।
তবে শুধু ক্যানসার নয়, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে হাঁপানিও প্রাণঘাতী হকে পারে। ২০২২ সালের গ্লোবাল অ্যাজ়মা রিপোর্ট বলছে ভারতে সাড়ে তিন কোটি মানুষ এই অসুখের শিকার। বিশ্ব জুড়ে অন্তত সাড়ে ৪ লাখ হাঁপানি রোগীর প্রতি বছর মৃত্যু হয়।