গাছে ফল ধরার পরই পাতার গুরুত্ব যেন কমে যায়। ফলগুলিই কেবল বাজারে জায়গা পায়, এ দিকে পাতাগুলি ঝরে পড়ে সময় মতো। তৈরি হয় শিল্প বর্জ্য। কিন্তু জানেন কি, গাছটির পাতার মধ্যে থাকা প্রধান বায়ো-অ্যাক্টিভ যৌগগুলি হুবহু মিলে যায় ফলের সঙ্গেই। ফেনোলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনলের মতো যৌগগুলি মানুষের সুস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনই জানিয়েছে ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর সংগ্রহে থাকা একটি গবেষণাপত্র। ইটালি এবং স্পেনের বেশ কিছু পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মিলে এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছেন। সেখানে বিভিন্ন ফলের পাতার উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একটি গবেষণাপত্রে বলা হচ্ছে, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা ফলগাছের পাতাগুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন, বহু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন। এটা তো কোনও কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না।সে কারণেই পাতাগুলিকে খাদ্য শিল্প থেকে শুরু করে প্রসাধনী শিল্প ও ঔষধ শিল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।’’
কোন পাতার কী গুণ?
আঙুর গাছের পাতা
১. আঙুরপাতায় রয়েছে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য। আর তাই হার্টের রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২. প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকায় প্রদাহজনিত রোগ উপশমে কার্যকরী। তা ছাড়া, আর্থ্রাইটিস রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে।
৩. ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় আঙুরপাতা খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়। পাশাপাশি, কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
পাতিলেবু গাছের পাতা
১. পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ভিটামিন সি-তে ভরপুর। মানসিক চাপ, প্রদাহজনিত রোগমুক্তিতে সাহায্য করে পাতিলেবুর পাতা। পাশাপাশি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে ভিটামিন সি-র অবদান অঢেল।
২. হজমের সমস্যা দূর করতে পারে। রন্ধনশিল্পে লেবুপাতার গুরুত্ব অপরিসীম। একাধিক রান্নায় লেবুপাতা মিশিয়ে দিলে অন্য মাত্রা যোগ হয়।
৩. অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ বলে লেবুপাতার সাহায্যে দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ (হার্টের সমস্যা বা ক্যানসার) থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কোন ফলের পাতা কত ধরনের গুণাগুণের আধার। ছবি: সংগৃহীত।
কমলালেবু গাছের পাতা
১. ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফাইবারে ভরপুর বলে কমলালেবুর পাতা সেবনে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে।
২. শিশুদের ক্ষেত্রে খিদে বাড়ানোর জন্য অনেক সময়ে এই গাছের পাতা কার্যকরী। এমনকি, হজমের সমস্যা দূর করতে পারে এটি।
৩. স্নায়ুতন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ? মন-শরীর ঠান্ডা করতে কমলালেবুর পাতা খুব কাজে দেয়। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা থেকে রেহাই মেলে।
আপেল গাছের পাতা
১. আপেলের পাতায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া হজমের সমস্যা দূর করে।
২. আপেলপাতার অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য ছোটখাটো ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
৩. আপেল পাতায় থাকা ফাইবার ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
আম গাছের পাতা
১. আমপাতায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ট্যানিন। তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরে রক্ত চলাচলকে উন্নত করতে পারে।
২. আমপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ডায়াবিটিক বৈশিষ্ট্য, যার ফলে এই পাতা খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩.অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর আমপাতার ব্যবহারে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যও ভাল হয়। চেহারায় এবং চুলে বার্ধক্যের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়ার গতিও কমিয়ে দিতে পারে।
পেয়ারা গাছের পাতা
১. পেয়ারাপাতায় অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যের জেরে বদহজমের সমস্যা, ব্লোটিং (পেট ফাঁপার সমস্যা), ডায়েরিয়ার মতো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২. ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পেয়ারাপাতা খুব উপকারী। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এই পাতার।
৩. পেয়ারাপাতা চিবোলে দাঁত ও মুখের ভিতরের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। জীবাণুর সঙ্গে লড়াই, দাঁতে ব্যথা কমানো, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য উপযুক্ত এটি।
পেঁপে গাছের পাতা
১. পেঁপে পাতার নির্যাস রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। বিশেষ করে ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের জন্য পেঁপে পাতার রস খাওয়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
২. প্যাপেইনের মতো এনজ়াইম প্রোটিন ভেঙে দিতে সক্ষম। তাই পেঁপে পাতা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন অর্থাৎ, দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করে দিতে পারে। এর ফলে হজমশক্তিও উন্নত হয়।
৩. লিভার ডিটক্সিফিকেশনের কারণে ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। ফলে পেঁপে পাতার রস খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, কালো কালো ছোপ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।