ইউটিউব খুললেই খাবারের বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। ফেসবুকের নানা রিলে ফুড ব্লগারদের দাপাদাপি। জাঙ্ক ফুডের হরেক রকম বিজ্ঞাপনে ভরে রয়েছে সমাজমাধ্যমের পাতাও। সেখানে লোভনীয় সব খাবারের ছবি, বিপুল ছাড়ের আকর্ষণ। এই সব দেখেই বাইরের খাবারের প্রতি ঝোঁক আরও বাড়ছে শিশু এবং কমবয়সিদের। আর এটিও হল ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এমনটাই দাবি করেছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিজ্ঞাপনে জাঙ্ক ফুডের ছবি দেখেই নাকি এই সব খাবার বেশি খেয়ে ফেলছে ছোটরা। দিনে কম করেও ১৩০ ক্যালোরি বেশি ঢুকছে তাদের শরীরে।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ লিভারপুলের গবেষকেরা সে দেশের শিশুদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দাবি করেছেন, পিৎজ়া, বার্গার, সসেজ-সালামির এত রকম বিজ্ঞাপন দেখানো হয় আজকাল, যে এই সব খাবারের লোভনীয় ছবি দেখেই শিশুদের মধ্যে সেগুলি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ির খাবার আর মুখেই রুচছে না। জাঙ্ক ফুড এতটাই সহজলভ্য ও তাতে এত পরিমাণে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, যে সহজেই তা কিনে ফেলা যায়। অনলাইনে অর্ডার দিলে দ্রুত চলেও আসে।
আরও পড়ুন:
জাঙ্ক ফুডের বিজ্ঞাপন কতটা ক্ষতিকর হয়ে উঠছে, তা নিয়ে বিদেশে সমীক্ষা হলেও, এ দেশেও তা প্রযোজ্য। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের একটি গবেষণাপত্র ‘পাবমেড’-এ প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৪-এ। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেছিলেন, ‘ফুড মার্কেটিং’-এর প্রভাব শিশু ও কমবয়সিদের খাওয়াদাওয়ার ধরনে বদল আনছে। পিৎজ়া, বার্গার অথবা নুডল্সের বিজ্ঞাপনকে এতটাই চমকপ্রদ ও লোভনীয় করে দেখানো হচ্ছে যে, শিশুরা সেই বিজ্ঞাপন দেখেই তা খাওয়ার জন্য বায়না করছে। অভিভাবকেরাও তা কিনে দিচ্ছেন এবং নিজেরাও খাচ্ছেন। ফলে স্থূলতা বাড়ছে। তাই বিজ্ঞাপনগুলিই পরোক্ষে অনুঘটকের মতো কাজ করছে।
খেয়াল করলে দেখবেন, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা ও প্যাকেটজাত খাবার বা অন্য ফাস্টফুডের বাজার এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও পৌঁছে গিয়েছে। যাঁদের মোটামুটি ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা সাধ্যের বাইরে খরচ করেও বাচ্চাদের চিপ্স জাতীয় প্যাকেটের খাবার, কেক-পেস্ট্রি বা ঠান্ডা পানীয় কিনে খাওয়াচ্ছেন।
জাঙ্ক ফুডের প্রতি আকর্ষণ এত সহজে যাওয়ার নয়। তবে বায়না করলেই সঙ্গে সঙ্গে কেনা খাবার খুদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। ফল, ড্রাই ফ্রুটসের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও যে পেট ভরবে, সেটা বোঝাতে হবে সন্তানকে। ঘরোয়া খাবারের স্বাদ কী ভাবে খুদের মনের মতো করে তোলা যায়, সে দিকে নজর দিতে হবে অভিভাবকদের।