উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেশ ক’টা দিন তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়া হয়েছে। সময়েরও ঠিক-ঠিকানা ছিল না। তাই পেটটা কিছু দিন ধরেই ভোগাচ্ছে। গ্যাস, অম্বল তো লেগেই থাকে। ইদানীং দেখছেন সকাল থেকেই পেট ভার, অম্বল, চোঁয়া ঢেকুরের সমস্যা ভোগাচ্ছে। খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষণ পর মনে হচ্ছে পেটের ভিতর থেকে সবটা যেন উপর দিকে উঠে আসতে চাইছে। সব সময় যে বমি হচ্ছে তা-ও নয়। যা-ই খান না কেন, গল-বুক জ্বালা হচ্ছে। এমন সমস্যা হলে সকাল সকাল হজমের ওষুধ বা অ্যান্টাসিড খেয়ে ফেলার অভ্যাস অনেকেরই থাকে। এতে সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও তা নির্মূল হয় না। চিকিৎসকদের মতে, বুক জ্বালা, মুখে টক ভাব বা চোঁয়া ঢেকুরের কিন্তু ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ়-এর লক্ষণ হতে পারে।
পাকস্থলীর খাদ্যবস্তু মুখগহ্বর এবং পাকস্থলীর সংযোগকারী খাদ্যনালীর মধ্য দিয়ে উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়, তখন এই সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে জ্বালার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই অংশের পেশির বলয়কে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙ্কটার’ বা ‘এলইএস’ বলা হয়। এটি দুর্বল হয়ে গেলেই সমস্যা দেখা দিতে থাকে। পাকস্থলী থেকে খাদ্যবস্তু এবং পাকরসে উপস্থিত বিভিন্ন অ্যাসিড খাদ্যনালি দিয়ে উপরের দিকে উঠে আসতে চায়। তখনই অম্বল হয়। অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে হলে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন, তবে পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু উপায়ও আছে যা কষ্ট কমাতে পারে।
আরও পড়ুন:
সকাল থেকে অম্বল, বুক জ্বালা হলে প্রতিকারের উপায় কী?
১) যদি কারও হজমের সমস্যা থাকে, তা হলে খাওয়ার রুটিনে ঘন ঘন পরিবর্তন না আনাই ভাল। এ ছাড়াও খাওয়ার পর বসে বা শুয়ে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলেও ভাল। খুব ভাল হয় যদি ঘুমোতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে খেতে নিতে পারেন।
২) সকালে খালি পেটে লেবুর শরবত খান অনেকেই। মেদ কমানোর জন্য উষ্ণ গরম জলে মধু-লেবুর শরবত খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। কিন্তু অম্বলের সমস্যা থাকলে ভুলেও লেবুর শরবত খাবেন না। গ্যাস-অম্বল থাকলে কোনও রকম লেবুই বেশি খাওয়া ঠিক নয়। লেবু-পুদিনার শরবতও খাবেন না।
৩)হজমের জন্য মৌরি খুবই কাজ দেয়। অনেকে খাওয়ার শেষে মৌরি খেয়ে থাকেন। গ্যাস-অম্বলের উপশমে মৌরি ভেজানো জল বা মৌরি দেওয়া চা খুবই কাজের।
৪) গ্যাস- অম্বল থেকে মুক্তি পেতে আদাও অনেক রকম ভাবে খাওয়া যায়। যেমন- জোয়ানের সঙ্গে আদা মিশিয়ে, আদা কুচির সঙ্গে বিট নুন দিয়ে, জোয়ান আর আদা কুচি রাতভর জলে ভিজিয়ে সেই জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেলে সুরাহা হয়।
৫) এক চামচ মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল ছেঁকে খেলে উপকার হবে। তবে মেথির পরিমাণ বেশি হলে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬) সজনে পাতা, সজনে ডাঁটা, এমনকি সজনে পাতা বেটে স্মুদি বানিয়ে খেলেও লাভ হবে। সজনের মধ্যে থাকে পলিফেনল নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও প্রদাহ কমায়।
৭) এক কাপ করে গোটা জিরে, মেথি, মৌরি, জোয়ান ও সর্ষে নিতে হবে। সমস্ত উপকরণ শুকনো খোলায় কম আঁচে নাড়াচাড়া করুন। সুন্দর গন্ধ বার হলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এ বার ঠান্ডা করে সেগুলি পিষে নিয়ে পাউডার বানিয়ে নিন। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস জলে এক চামচ করে এই পাউডার মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে অম্বলের সমস্যা তো কমবেই, ওজনও কমতে থাকবে ধীরে ধীরে।