মুখ ও গলার ক্যানসার উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। দেশের কয়েকটি রাজ্যে এর প্রকোপ বেশি। তামাকজাত নানা দ্রব্য, যেমন সিগারেট বা বিড়ি, গুটখা, জর্দা, খৈনি থেকে বাড়ছে মুখ ও গলার ক্যানসারের ঝুঁকি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, কমবয়সিদের মধ্যেই গলার ক্যানসারের প্রকোপ বেশি। এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, যা সাধারণ কাশি বা গলা ব্যথা বলেই ভ্রম হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারের লক্ষণ ধরা পড়ে দেরিতে। যদি গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়, তা হলে সতর্ক হতে হবে। খাবার খেতে সমস্যা, ঢোক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন কাশি এবং কাশির সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে। নাক, কান, মুখ, গলা— শরীরের যে কোনও অঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। মলদ্বার থেকেও অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। কোনও ঘা বা ক্ষত, তা শরীরের যেখানেই হোক, মুখে হলে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যদি অনেক দিন ধরে তা না সারে, তার পিছনে ক্যানসারের ভূমিকা থাকতে পারে। এই ক্যানসারের অনেকগুলি পর্যায় আছে। শুরুটা হয়তো জিভে বা গলায় হল, ধীরে ধীরে লসিকা গ্রন্থিগুলিতে ছড়িয়ে পড়বে, তার পর ফুসফুস অবধি ছড়াবে ক্যানসার। যত দেরি করে ক্যানসার ধরা পড়বে, ততই সম্ভাবনা কমবে নিরাময়ের।
আরও পড়ুন:
আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, তার মধ্যে একটি কণ্ঠস্বরের বদল। অনেকেই ভাবেন ঠান্ডা লেগে গলা বসে গিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। গলার স্বর পরিবর্তনের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হল ল্যারেনজাইটিস। এটি দু’প্রকার হতে পারে। অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস সাধারণত ঠান্ডা লেগে বা হঠাৎ খুব জোরে চিৎকার করে কথা বলার কারণে হয়। এসি এবং নন-এসির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন, ঠান্ডা কিছু খাওয়া থেকে অ্যাকিউট ল্যারেনজাইটিস হতে পারে। কিন্ত ক্রনিক অনেক বেশি বিপজ্জনক। ভোকাল কর্ডে অনেক সময়ে ফ্লুয়িড জমে যেতে পারে। সেটিও ক্রনিক ল্যারেনজাইটিসের কারণ। এর থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
গলার ক্যানসার প্রথম দিকে ধরা পড়ার পর চিকিৎসা করালে তা সারতে পারে। তবে চিকিৎসা মানে কিন্তু শুধু অস্ত্রোপচারটুকুই নয়। তার সঙ্গে রেডিয়েশন, কেমোথেরাপিও জরুরি। চিকিৎসার পরে প্রথম দু’বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ক্যানসার ফিরে আসতে পারে। এই সময়টা খুব সংবেদনশীল। বার বার পরীক্ষা করানো জরুরি। ক্যানসার নিরাময় হলেও বা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বছর পাঁচেক পরীক্ষা করিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে জীবনযাপনেও সংযম আনতে হবে। ধূমপান, তামাকজাত যে কোনও পণ্যের সেবন বন্ধ করতে হবে।