সুস্থ-সবল মানুষ। কোনও অসুখবিসুখ নেই। আচমকাই একদিন বুকে ব্যথা, তার পর ধরা পড়ল হার্ট অ্যাটাক। এমন ঘটনা আকছারই ঘটছে। হৃদ্রোগ অনেক সময়েই বলে কয়ে আসে না। হার্টের ধমনীতে নিঃশব্দে রক্ত জমাট বাঁধছে কি না, তা বোঝে কার সাধ্য। বুকে ব্যথা নেই, রাতে শুয়ে ঘামও হয় না, অন্যান্য যা ভীতিকর লক্ষণের কথা বলা হয়, তা-ও নেই। এর পরেও ধরা পড়তে পারে হৃদ্রোগ। কারণটা হল রক্ত জমাট বেঁধে হৃৎস্পন্দন পুরোপুরি বিগড়ে যাওয়া। বাড়ির বয়স্কদের যদি হার্টের সমস্যা থেকে থাকে অথবা হার্টে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে, তা হলে সব সময়ে সতর্ক থাকা জরুরি। বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক আসতে পারে। লক্ষণ দেখে তা বোঝা সম্ভব হয় না। তাই আপনার প্রিয়জনের হার্টের স্বাস্থ্যে নজর রাখবে, এমন ডিভাইস কিনে রাখুন বাড়িতে। বাজারে এখন নানা রকম হার্ট হেল্থ মনিটরিং ডিভাইস পাওয়া যায়। কোনগুলি কিনলে সুবিধা হবে, জেনে নিন।
কখন বুঝবেন, সতর্ক হতে হবে
হৃদ্পিণ্ডের কোনও সমস্যা হলে মূলত চারটি কারণ থেকে তা বোঝা যায়। তার মধ্যে রয়েছে হাঁটাচলা বা কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা করা, আবার কখনও কখনও চোখে অন্ধকার দেখা। শরীরে এই রকম উপসর্গ দেখা গেলে সতর্ক হতে হবে। হতেই পারে সেগুলি ‘করোনারি আর্টারি ডিজ়িজ়’, ‘ভ্যালবুলার ডিজ়িজ়’, ‘কারেন্ট সিস্টেম অ্যাবনরম্যালিটি’, বা হৃদ্পেশির দুর্বলতা সংক্রান্ত কোনও অসুখ। সে ক্ষেত্রে বিপদ সঙ্কেত পেতে ভরসা হতে পারে কিছু ডিভাইস।
হার্ট হেল্থ মনিটরিং ডিভাইস। ছবি: এআই।
ফিটনেস ট্র্যাকার
নানা ধরনের ফিটনেস ট্র্যাকার পাওয়া যায়। যেটি হার্ট রেট, পাল্স রেট ঠিকমতো দিতে পারবে, তেমন দেখেই কিনবেন। এমন অনেক ফিটনেস ট্র্যাকার আছে, যেগুলি ‘স্লিপ প্যাটার্ন’ এবং কিছু ক্ষেত্রে ইসিজি ডেটাও দিতে পারে। হার্টের ছন্দ অনিয়মিত হয়ে গেলে সতর্কবার্তাও দেবে। এই ধরনের ডিভাইস সহজলভ্য এবং বয়স্কেরা কাছে রাখতেও পারবেন। যা দিনে ও রাতে হৃৎস্পন্দনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে, এমনকি রোজের হাঁটাচলা, ক্য়ালোরি খরচের পরিমাণও জানাবে।
আরও পড়ুন:
হোল্টার মনিটর
গতানুগতিক ইসিজি-র চেয়ে অনেক নিখুঁত ভাবে ডেটা দিতে পারে হোল্টার মনিটর। এই ডিভাইস ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধরে হার্টের স্পন্দন ও কার্যকলাপের ডেটা নেবে, তা থেকে জানাতে পারবে হৃৎস্পন্দনের গতি অনিয়মিত হয়েছে কি না। এটি আসলে বহনযোগ্য ইলেক্ট্রোকার্ডিয়োগ্রাম, যাতে সেন্সর লাগানো আছে। বুকে ছোট ছোট প্লাস্টিকের প্যাচ (ইলেক্ট্রোড) লাগিয়ে দেওয়া হবে, যা হার্ট রেট মাপবে। এই প্যাচগুলি সংযুক্ত থাকবে একটি মনিটরের সঙ্গে, যেখানে হৃদ্গতি দেখা যাবে। বাড়িতে যদি এমন রোগী থাকেন, যাঁর হার্ট রেট সর্বক্ষণ নজরে রাখতে হবে, তাঁর জন্য এমন ডিভাইস খুব কাজের হতে পারে।
পাল্স অক্সিমিটার
করোনার সময়ে এর চাহিদা বেড়েছিল। আঙুলে ক্লিপ লাগিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। শরীরে অক্সিজেন কমছে কি না, তা জানতে দিনে ৩-৪ বার বা প্রয়োজন মতো পরীক্ষা করে দেখা যায়। যদি দেখা যায়, অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে।
স্লিপ ট্র্যাকার
স্লিপ ট্র্যাকার হলো এমন একটি যন্ত্র বা অ্যাপ, যা আপনার ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করে, যেমন— আপনি কখন ঘুমোন এবং কখন জেগে ওঠেন, ঘুমের গুণমান, নাক ডাকার মতো বিষয়গুলি রেকর্ড করে। শুধু তা-ই নয়, ঘুমের সময়ে হৃৎস্পন্দনের হার, শ্বাসের গতিবিধিও ট্র্যাক করে এই ডিভাইস। ঘুমের সময়ে হৃদ্গতি অনিয়মিত হচ্ছে কি না, ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে কি না, তা-ও বোঝা যায় এই ট্র্যাকারে। বড় বিপদ এড়াতে এই ট্র্যাকিং ডিভাইস বাড়িতে রাখতেই পারেন।