জ্বর, সর্দি-কাশি সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতেই হচ্ছে। এতে জ্বর কমছে ঠিকই, কিন্তু অন্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ হওয়ার পরেই শুরু হচ্ছে বদহজম, পেটের গোলমাল। কারও ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যও ভোগাচ্ছে। পেট ফাঁপা, পেট ভার, খাবার দেখলেই বমি ভাব রয়েছেই। এই সবই অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা চলছে অন্তত সপ্তাহখানেক। দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এমন সমস্যায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য সহজ সমাধান রইল।
অ্যান্টিবায়োটিক তো বটেই, যে কোনও ওষুধই দীর্ঘ সময় ধরে খেলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবেই। যেমন, ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার ওষুধ খেলে গায়ে, হাত-পায়ে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, বমি ভাবের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। আবার ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে প্রচণ্ড দুর্বলতা, ক্লান্তি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক জানাচ্ছেন, যে কোনও ওষুধই একটানা খেয়ে গেলে সেগুলি রোগ সারায় ঠিকই, তবে অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলির ক্ষতি করে। সেই ব্যাক্টেরিয়াগুলিও নষ্ট হতে থাকে। ফলে বিপাকক্রিয়ায় বড়সড় প্রভাব পড়ে। হজমের গোলমাল বাধে, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে অথবা পেটখারাপের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্যও হয়। তাই অ্য়ান্টিবায়োটিক খান বা যে কোনও ওষুধ, একটানা খেতে হলে পথ্যের ব্যাপারটাও খেয়াল রাখা জরুরি। এমন খাবার খেতে হবে যাতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন ভাবে না হতে পারে।
কী কী খেলে পেটের সমস্যা কমবে?
প্রোবায়োটিক
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। প্রোবায়োটিক হল উপকারী ব্যাক্টেরিয়া, যা অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকের মধ্যে খেতে হবে দই। তবে ঘরে পাতা টক দই হলে বেশি ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
দইয়ের ঘোল খেতে পারেন। ঘোলও প্রোবায়োটিকে সমৃদ্ধ, যা খেলে পেটের সমস্যা দূর হবে।
যে কোনও গ্যাঁজানো (ফার্মেন্টেড) খাবারে প্রোবায়োটিক থাকে। লেবু হোক আম কিংবা সব্জির আচার, খাওয়ার পাতে একটু করে রাখলেই প্রোবায়োটিকের অভাব দূর হবে।
প্রিবায়োটিক
প্রোবায়োটিকের পাশাপাশি খেতে হবে প্রিবায়োটিক। প্রিবায়োটিক হল এক ধরনের ফাইবার জাতীয় উপাদান। এটি পাচিত হয় না, তবে অন্ত্রে ভাল ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। প্রিবায়োটিকের জন্য দইয়ের সঙ্গে ওট্স মিশিয়ে খেলে উপকার হবে, এই ওট্সে প্রিবায়োটিক রয়েছে। কলাতেও প্রিবায়োটিক থাকে। দই ও ওট্সের সঙ্গে কলা মেশালে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। কাঁচা রসুনের মধ্যে ১৭.৫ শতাংশ প্রিবায়োটিক থাকে। রোজ সকালে উঠে খালি পেটে রসুনের কোয়া খেতে বলা হয়। রান্নায় রসুন দিয়ে খেলে কিন্তু হবে না।
যে সব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
১) মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। এটি ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এবং লিভারের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
২) অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে চলবে না। এতে অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট হতে থাকবে।
৩) ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে এমন খাবার, ভাজাভুজি, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়া চলবে না।
৪) অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আঙুর বা টক জাতীয় ফল না খাওয়াই উচিত।