কফি যেমন ঝিমিয়ে পড়া মেজাজ চাঙ্গা করতে পারে, তেমনই মেদবহুল শরীরের ওজন কমিয়ে চেহারায় একটা ছিমছাম ভাবও আনতে পারে। এমনই বলছে বিজ্ঞান। বহু গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কফি খেয়ে ওজন কমেছে। কিন্তু ব্যাপারটি কি সবার ক্ষেত্রেই সমান? ধরুন আপনার ওজন ৮০ কেজি। আপনি প্রতি দিন কফি খেতে শুরু করলেন। তা হলেই কি দিন ১৫ পরে আপনার ওজন নিদেনপক্ষে ৫ কেজি কমবে? কমবে কি না তার পুরোটাই নির্ভর করবে কী ভাবে কফি খাওয়া হচ্ছে, তার উপর।
কফি কী ভাবে খাবেন, সে উত্তর জানতে হলে আগে জানতে হবে কফি কী ভাবে ওজন কমাতে পারে।
১। মেটাবলিজ়ম বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে কফি
শরীরের মেদ ঝরাতে হলে বিপাকের হার বেশি হওয়া জরুরি। কফি বিপাকের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো উদ্দীপক এ কাজে এতটাই সিদ্ধহস্ত যে, বাজারচলতি ওজন কমানোর ওষুধেও তা ব্যবহার করা হয়। ক্যাফিনে যেমন বিপাকের হার বাড়ে, তেমনই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাবার থেকে শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
২। মেদ ভাঙতে সাহায্য করে
শরীরের ফ্যাট সেল জমা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে কফি। পাশাপাশি, ফ্যাট টিস্যু থেকে ফ্যাটি অ্যাসিডও বার করে আনতে পারে কফিতে থাকা ক্যাফিন।
৩। খিদে কমায়
কফি খেলে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য খিদের বোধ চলে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া থেকে শরীরে মেদ জমার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।
অর্থাৎ কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু কফি খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করলে কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।
১। চিনি বিয়োগ, লেবু যোগ
ওজন ঝরানোর জন্য কফি খেলে সব সময়েই চিনি ছাড়া কালো কফি খান। দরকার হলে তাতে লেবুর রস যোগ করতে পারেন। তাতে বিপাকের হার আরও বাড়বে। মেদ ঝরবে দ্রুত।
২। কফিতে ডার্ক চকোলেট
বাজার চলতি যে কোনও ডার্ক চকোলেট নয়, খাঁটি ডার্ক চকোলেট কফিতে মিশিয়ে খেলে কফির অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসের পরিমাণ বাড়ে। যা ওজন কমানোর সহায়ক।
৩। কখন খাবেন
শরীরচর্চার আগে কফি খেলে তা দ্রুত মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে। কিছু গবেষণা এমনও বলছে যে, খাওয়ার আগে কফি খেলেও শরীরে ক্যালোরি কম যায়।
৪। অভ্যাসে প্রভাব নষ্ট
কফি খেয়ে মেদ ঝরানো কখনওই ওজন কমানোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তার কারণ, কফি খাওয়ার অভ্যাস এক বার তৈরি হলে তা আর ওজন কমানোর কাজ আগের মতো করে না। কফির প্রভাব শরীর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তাই কফির অভ্যাস যদি তৈরি করতে না চান, তবে দু’সপ্তাহ টানা কফি খাওয়ার পরে দু’সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। তার পরে আবার দু’সপ্তাহ কফি খান।
৫। স্থূল ব্যক্তির শরীরে প্রভাব কম
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যাঁরা খুব বেশি মোটা নন, কফি খেয়ে তাঁদের ওজন ঝরেছে দ্রুত। তুলনায় যাঁদের অতিরিক্ত স্থূলত্বের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের উপর কফির প্রভাব কিছুটা কম। প্রথম ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ দ্রুত ওজন ঝরেছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ।
৬। ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে যায় রক্তেই
কফি খেলে ফ্যাট টিস্যু থেকে যে ফ্যাটি অ্যাসিড নির্গত হয়, তা রক্তে থেকে যায়। কফি খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা করলে তবেই ওই ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
সতর্কতা
প্রাথমিক ভাবে খানিকটা ওজন ঝরানোর জন্য কফিকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কারণ, ওজন কমানোর জন্য কিছুটা প্রণোদনা দরকার। চেষ্টার ফল চোখে না দেখলে এগিয়ে যাওয়া মুশকিল হয় অনেকের কাছেই। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু কফির উপর ভরসা করা ঠিক নয়। তার সঙ্গে জীবনযাপনের ধরনেও স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা জরুরি।