E-Paper

সমস্যা যখন চোখের গঠনে

জন্মগত ভাবে চোখের গঠন ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। এর কি নিরাময় সম্ভব?

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৩১

জন্মগত ভাবে চোখের গঠনগত সমস্যা মাইক্রোপথ্যালমিয়া নামে পরিচিত। একটি বা দু’টি চোখেই এই সমস্যা হতে পারে। এর ফলে জন্মের সময়েই শিশুর একটি বা দু’টি চোখের গড়ন ছোট কিংবা বিকৃত হয়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কেন হয় এই সমস্যা?

মায়ের গর্ভে থাকাকালীনই শিশুর চোখের গঠন সম্পূর্ণ না হলে এই জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থা পূর্ণ হওয়ার আগে প্রিম্যাচিয়োর শিশু জন্ম নিলে তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে এই মাইক্রোপথ্যালমিয়ার সমস্যা দেখা যায়। বাইল্যাটেরাল বা ইউনিল্যাটেরাল, অর্থাৎ শিশুর দু’টি বা একটি চোখে এই সমস্যা হতে পারে। মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার সময়ে যদি একটা চোখ তৈরিই না হয়, তা হলে সেই অবস্থাকে বলে ক্রিপ্টোথ্যালমোস। চোখের পাতা-ই তৈরি হয় না এ ক্ষেত্রে। তবে পরবর্তী কালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার চিকিৎসা সম্ভব।

জিনগত কারণ, মায়ের অতিরিক্ত অপুষ্টি-সহ একাধিক কারণে এই বিকলাঙ্গতার সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময়ে প্রিম্যাচিয়োর শিশুদের যখন ইনকিউবেটরে রাখা হয় ব্লু লাইটে, তখন অক্সিজেন দেওয়ার ফলে অনেক সময়ে রেটিনার শিরা-উপশিরার উপরে চাপ পড়ে ও তা ছিঁড়ে যায়। এই কারণেও প্রিম্যাচিয়োর শিশুদের মধ্যে মাইক্রোপথ্যালমিয়ার সমস্যা দেখা যায়।

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত চৌধুরী বললেন, “অনেক সময়েই দেখা যায়, প্রিম্যাচিয়োর বেবিদের চোখের আইবলস মাপের তুলনায় ছোট কিংবা তার পরতগুলো ঠিক মতো তৈরি হয়নি। এর ফলে বাচ্চাটা যত বড় হয়, তার দৃষ্টি তত ক্ষীণ হতে থাকে।” এই সব শিশুর ক্ষেত্রে সাধারণত জন্মের পরে প্রথম তিন বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। দেখেন, কর্নিয়ার ব্যাস স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট তৈরি হল কি না। চোখের আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় চোখের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ব্যাস ঠিক আছে কি না। “তিন বছরে বাচ্চাদের শারীরিক গড়ন অনেকটাই আকার নিয়ে নেয়। তবে কর্নিয়ার ডায়ামিটার যদি তখনও স্বাভাবিকের চেয়ে কমই থাকে, তাকে বলে মাইক্রোকর্নিয়া। রেটিনা ঠিক মতো তৈরি না হলেও দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতি হয়। এই সব ক্ষেত্রে শিশুদের নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো দরকার,” বললেন ডা. চৌধুরী।

চিকিৎসা

জন্মগত এই সমস্যা চিরতরে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এই ধরনের শিশুদের প্রথম থেকেই রিহ্যাবিলিটেশনে দেওয়া হয়। আলোর সাহায্যে স্টিমুলেট করে দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। পেডিয়াট্রিক অপথ্যালমোলজিস্টরা চেষ্টা করেন, যাতে চোখের বিভিন্ন অংশ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমজোরি না হয়ে পড়ে।

প্রিম্যাচিয়োর শিশুদের ক্ষেত্রে আরওপি অর্থাৎ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিয়োরিটিও আর একটি পরিচিত সমস্যা। ডা. চৌধুরীর কথায়, “শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ইউএসজি-তে তার অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বোঝা গেলেও চোখের গঠন খুব নিশ্চিত ভাবে বোঝা যায় না। ফলে কোনও জন্মগত বিকৃতি থাকলেও আগে থেকে ধরা সম্ভব হয় না।”

তবে এখন চোখের চিকিৎসা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তাই চোখের গঠনের জন্মগত ত্রুটির নিরাময় পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশেই সম্ভব।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Eyes

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy