হেঁশেলের অত্যন্ত সাধারণ একটি উপকরণ, যা ছাড়া প্রায় কোনও রান্নাই হয় না, তার এত গুণ! শুক্তোর মতো দু’একটা রান্না ছাড়া অন্য তরি-তরকারিতে হলুদ দেওয়াটা ভারতীয় রান্নার অঙ্গ। জ্বরজারি, সর্দিকাশিতে হলুদ দুধ খাওয়াও দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। কেউ আবার চুমুক দেন হলুদ চায়েও।
হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন নামে এক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা রোগ প্রতিরোধে, শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। কারকিউমিন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আর্থ্রাইটিস,অ্যাজ়মা, হার্টের রোগ প্রতিরোধেও কারকিউমিনের উপকারী। এশিয়ায় হলুদের ব্যবহার শুধু মশলা নয়, ঔষধি হিসাবেও।
কিন্তু কী ভাবে খেলে হলুদের পুষ্টিগুণ বেশি মিলবে? দুধ-হলুদে চুমুক দেবেন না কি, দিন শুরু করবেন হলুদ চায়ে গলা ভিজিয়ে?
রসায়নের গবেষক রাঘবেন্দ্র রেড্ডি কোঠা তাঁর ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, ঈষদুষ্ণ দুধে হলুদের কারকিউমিন বেশি সক্রিয় থাকে। গবেষণার জন্য দুধ, ঠান্ডা, গরম— বিভিন্ন তাপমাত্রার জল এবং পানীয়ে হলুদ মিশিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, ঠান্ডা জলে হলুদ মেশালে কারকিউমিন মেলে প্রতি গ্রামে ০.৫৫মিলিগ্রাম। ঈষদু্ষ্ণ জল বা হলুদ চায়ে সেই মাত্রা হয় প্রতি গ্রামে ২.৪২ মিলিগ্রাম। তবে সবচেয়ে বেশি মেলে ঈষদুষ্ণ দুধে। কারকিউমিনের মাত্রা থাকে প্রতি গ্রামে ৬.৭৬-৯.৭৫ মিলিগ্রাম। তবে উদ্ভিজ্জ দুধে ( কাঠবাদাম, সয়াদুধ ) এই মাত্রা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ এবং প্রদাহ কমাতে কোনটি বেশি সহায়ক?
গাঁটে ব্যথা, জ্বর, প্রদাহ কমাতে হলুদ দুধ বেশি উপকারী। ভাল হয় যদি ঈষদুষ্ণ দুধে হলুদ মেশানো হয়।
এতে একটু গোলমরিচের গুঁড়ো যোগ করলে উপকারিতা বেশি মেলে।
বিপাকহার বৃদ্ধিতে কোনটি ভাল?
হলুদ চা খালি পেটে খেলে বিপাকহার বাড়তে পারে অনেকটাই। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে। চা বলা হলেও আসলে এতে চা পাতা থাকে না। বরং ঈষদু্ষ্ণ জলে হলুদ মিশিয়ে নেওয়া হয়। এই পানীয় শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অনেকে ঘরের তাপমাত্রায় থাকা জলেও হলুদ মিশিয়ে খান। তবে ঈষদুষ্ণ জল বা হলুদ চায়ে উপকার বেশি।
ঘুমের সমস্যায়
ঘুমের সমস্যায় ঈষদুষ্ণ দুধে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে খান। এতেও ঘুম ভাল হয়।
জ্বর, গায়ে ব্যথা, সর্দিকাশিতে হলুদ দুধ বেশি উপকারী। বিপাকহার বৃদ্ধি, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে, হজমে সাহায্য করে হলুদ চা। তাই সমস্যা অনুযায়ী পানীয় বদলাতে হবে। বিশেষত গ্যাস অম্বলের সময় হলুদ চা খাওয়া গেলেও দুধ বাদ দেওয়াই ভাল।