আবহাওয়ার বদলের সময় ভাইরাল জ্বরে বেশি ভোগে শিশুরা। গত কয়েক বছর ধরে অজানা জ্বরে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা থেকে। পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া ধরা পড়ছে না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উপসর্গ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ছোঁয়াচে রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণেই ঘন ঘন জ্বর, সর্দিকাশি, এমনকি শ্বাসের সমস্যাও হচ্ছে অনেক শিশুর। বর্ষার মরসুম এলেই আরএসভি-র প্রকোপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছোয় শিশুদের। এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধেই এ বার নতুন টিকা আসতে চলেছে।
প্রতি বছরই ঋতুবদলের সময়ে রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসের (আরএসভি) প্রকোপ বাড়ে। শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। বর্ষায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে যত না চিন্তা বাড়ে, ততটাই এই ছোঁয়াচে ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এই ভাইরাসকে কাবু করতেই প্রতিষেধক তৈরি করেছে আমেরিকার ওষুধ নির্মাতা সংস্থা মার্ক গ্রুপ। এই টিকার নাম ‘ক্লেসরোভিমাব’, যার ব্র্যান্ড নাম 'এনফ্লনসিয়া'। এটি আসলে একপ্রকার মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, যার একটিই ডোজ় দেওয়া হবে শিশুদের। আর এক ডোজ়েই আরএসভি-র বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে বলেই দাবি গবেষকদের। টিকার ডোজ়ে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হবে শিশুদের শরীরে, যা ছোঁয়াচে রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবে।
কী এই আরএসভি?
রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) হল আরএনএ ভাইরাস। সদ্যোজাত থেকে পাঁচ বছর বয়স অবধি শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানিয়েছেন, জন্মের এক মাস পর থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ভোগে ৩ থেকে ৬ মাসের শিশুরা। যে শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি খুব দুর্বল অথবা জন্মের পরে হার্ট বা ফুসফুসের কোনও ত্রুটি থাকে, তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। ভাইরাস শরীরে ঢোকার ৩ থেকে ৫ দিনের মাথায় উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। প্রায় এক থেকে দু’সপ্তাহ ভোগায় এই ভাইরাস।
আরও পড়ুন:
বাবা-মায়েরা কী কী লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন?
১) তিন দিনের বেশি জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি থাকলে সাবধান হতে হবে। শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হবে।
২) বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে কি না। যদি দেখেন, শিশু মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৩) জ্বরের সঙ্গেই পেটের গোলমাল হবে। ঘন ঘন বমি, ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৪) শিশুর প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে হবে। প্রস্রাব যদি দিনে পাঁচ বারের কম হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ভাইরাস থেকে বাঁচতে শিশুদের সব সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। বাইরে থেকে এলে হাত ধুয়ে তবেই শিশুর কাছে যান বা শিশুর জিনিসপত্র ধরুন। বাড়িতে কারও শ্বাসজনিত সমস্যা হলে কিংবা ঠান্ডা লাগলে তার থেকে শিশুকে দূরে রাখতেই হবে। কোনও রকম অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না শিশুদের। শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শমতোই ওষুধ খাওয়াতে হবে।