কখনও ভ্যাপসা গরম, আবার কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। এই সময় সংক্রমণ জনিত রোগ বেশি হয়। হজমে সমস্যা, পেটের গোলমাল, ডায়েরিয়া লেগেই থাকে। অজান্তেই কখন জন্ডিস বাসা বাঁধবে শরীরে, বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। জন্ডিস মানেই যে কেবল লিভারের সমস্যা, তা না-ও হতে পারে। কী কারণে রোগটি হচ্ছে, তা জানা খুব জরুরি।
রক্তে যে লোহিত রক্তকণিকা (আরবিসি) রয়েছে, তার আয়ু এমনিতে চার মাস। রোজই তাই মানুষের শরীরে কিছু কিছু কণিকা ভেঙে যায়। এই ভাঙনের ফলে আরবিসি থেকে বিলিরুবিন নিঃসৃত হয়ে রক্তে মেশে। বিলিরুবিন একটি যৌগ পদার্থ। এর স্বাভাবিক মাত্রা ১ বা ১.২ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার-এর নীচেই থাকে। রক্তের মাধ্যমে বিলিরুবিন প্রথমে পৌঁছয় লিভারে। এর পর লিভার থেকে বাইল ডাক্ট হয়ে যায় খাদ্যনালিতে। শেষে মল ও মূত্রের সঙ্গে কিছু পরিমাণে বেরিয়ে যায়। যদি এই পর্বটি বাধাপ্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ, বিলিরুবিন ঠিকমতো বেরোতে না পারে, তখন এর মাত্রা বাড়তে থাকে ও জন্ডিস হয়। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, কোনও ব্যক্তির হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগ, যেখানে রক্ত ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি)হলে অথবা কোনও সংক্রমণ জনিত রোগ হলে লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়ার ওই পর্বটি বাধা পায়। ফলে জন্ডিস হয়।
আরও পড়ুন:
আবার অনেক সময়েই গলস্টোন কিংবা গল ব্লাডার কিংবা প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের কারণেও রোগীর জন্ডিস হতে পারে। এই দু’টি ক্ষেত্রে লিভারের কোনও ক্ষতি হয় না। গরমকালে জন্ডিসের প্রকোপ বাড়ে। কারণ অনেকেই যেখান-সেখান থেকে জল পান করেন। আর রক্তবাহিত বা দেহরসের মাধ্যমে যে জন্ডিস হয়, তা প্রধানত হল হেপাটাইটিস বি আর হেপাটাইটিস সি।
কোন কোন উপসর্গ খেয়াল করতেই হবে?
উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকেরা প্রাথমিক ভাবে তা ধরে নিতে পারেন। যেমন, চোখের যে অংশটা সাদা (কনজাঙ্কটাইভা) তা কিছুটা হলুদ হয়ে যায়। এ ছাড়াও জিভের নিম্নাংশ, হাতের তালু হলুদ হলেও তা জন্ডিসের লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া হয়। চিকিৎসক রোগীকে দেখে নিয়ে সাধারণত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা জানতে লিভার ফাংশন টেস্ট করতে বলেন। সেই রিপোর্ট দেখেই বোঝা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্ডিস হয়েছে কি না।
কী কারণে রোগ হচ্ছে, তা দেখে তবে চিকিৎসা শুরু করতে হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর মতে, ক্যানসার কিংবা কোনও সংক্রমণ জনিত কারণে জন্ডিস হলে সেই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। তাই এই সব রোগী ও তাঁদের পরিবারের মানুষদের খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জলবাহিত কারণে জন্ডিস না হয়। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বাদের জন্ডিস হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় শরীরে এমন হরমোন বার হয়, যা থেকে জন্ডিস হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।