মাসখানেক পরেই প্রবীণ নাগরিকের দলে নাম লেখাবেন। কিন্তু তাঁর চেহারা ও ফিটনেস দেখে বোঝার জো নেই। চুল, দাড়িতে পাক ধরলেও চিরযুবক যেন! তিনি মিলিন্দ সোমন। ভারতের প্রথম সুপারমডেল। মিলিন্দকে দেখলেই প্রশ্ন জাগতে পারে, কী খেয়ে থাকেন তিনি? কোন ধরনের শরীরচর্চা করেন? তাঁর জীবনযাপনই বা কেমন? নিজের মুখেই তাঁর সুস্থতার চাবিকাঠির কথা বলেছিলেন সুপারমডেল তথা অভিনেতা।
দিন শুরু করার আগে চা-কফি ছাড়া চলে না অনেকেরই। কিন্তু স্রোতে গা ভাসাননি মিলিন্দ। তাঁর দিনটি শুরুই হয় অন্য ভাবে। মিলিন্দ বলেছিলেন, ‘‘আমি চা বা কফি, কোনওটাই খাই না সকালে। উঠেই আমার পেটে পড়ে ফলের রস। ছোট থেকেই চা-কফির অভ্যাস তৈরি করা থেকে বিরত থেকেছি। মনে আছে, ছোটবেলায় কোথাও পড়েছিলাম, এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। সাধারণত, মডেলরা প্রচুর চা এবং কফি পান করেন। সেই সংখ্যাটা এমনকি ১৫ থেকে ২০ কাপও হতে দেখেছি। কেউ কেউ ধূমপান করেন, কেউ বা মদ্যপান। আসলে মানসিক চাপের কারণে হয়তো মানুষ এই বদভ্যাসের কবলে পড়ে। কিন্তু আমি এ সবকে নিজের জীবন থেকে দূরে রেখেছি।’’
সুপারমডেল-অভিনেতার ডায়েটের ঝলক। ছবি: সংগৃহীত।
বাড়িতে না থাকলে, ধরে নেওয়া যাক, যখন কোথাও ভ্রমণ করছেন, সেই সময়ে সচরাচর ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু তখনও চা বা কফিতে চুমুক দেন না সুপারমডেল। ভাল ফল না পেলে পুরি ও ভাজার উপর ভরসা তাঁর। কিন্তু সেই পরিমাণও বেশ কম। উপায় না থাকলেই ভাজায় হাত দেন, নয়তো সেটিও বাদ। মাংসও খান না খুব বেশি।
এক সময়ে ভক্তদের অনুরোধ রেখে ইনস্টাগ্রামে নিজের সম্পূর্ণ ডায়েট প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেখানে লেখা,
· ১০টা নাগাদ জলখাবারে কয়েকটি বাদাম, একটি পেঁপে, একটি তরমুজ, ঋতুকালীন আরও একটি ফল, যেমন আম। সেটির সংখ্যা প্রায় ৪টি।
· দুপুর ২টোয় মধ্যাহ্নভোজনে চাল-ডালের খিচুড়ি, স্থানীয় ও ঋতুকালীন সব্জির তরকারি। খিচুড়ি যদি এক ভাগ হয়, দু’ভাগ তরকারি। সঙ্গে বাড়িতে বানানো দুই চা-চামচ ঘি। ভাত না খেলে ৬টি রুটি, ডাল এবং তরকারি। মাসে এক বার ছোট টুকরো চিকেন বা মটন অথবা একখানি ডিম।
· বিকেল ৫টা নাগাদ এক কাপ লাল চা। চিনির বদলে গুড় দিয়ে মিষ্টি করা।
· সন্ধ্যা ৭টায় নৈশভোজে একটি গোটা বাটি তরকারি। খুব খিদে পেলে অল্প খিচুড়ি।
· ঘুমোনোর আগে গরম জলে হলুদ মিশিয়ে খেয়ে নেন। তাতে মেশানো থাকে অল্প গুড়।
· মিষ্টি খান না একেবারেই। যদি খেতেই হয়, গুড় দিয়ে বানানো না হলে চেখেও দেখেন না।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত পেশাগত ভাবে সাঁতার কাটতেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ফলে তখন থেকেই ডায়েটের বিষয়ে সতর্ক হতে হয়েছে মিলিন্দকে।
খালি পেটে ফলের রস খেলে যদিও অনেকেরই অম্বলের সমস্যা হয়, রসে ঘনীভূত চিনি অনেকেরই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু মিলিন্দের এ ধরনেরর অসুবিধা হয়নি কোনও দিন। তাই সুপারমডেল-অভিনেতার ডায়েট মেনে চলতে হলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
তবে জলখাবারের সঙ্গে চা আর কফি না খাওয়ার ফলে মিলিন্দের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যায়নি বলেই আশা করা যায়। কারণ পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী এর আগে আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন, খাবারের সঙ্গে চা-কফি পান করা উচিত নয়। তা হলে খাবার থেকে পাওয়া আয়রন শরীরে শোষিত হতে পারে না, ফলে ঘাটতি দেখা যায়। তাই অন্তত এক ঘণ্টা আগে বা পরে চা বা কফি খাওয়া উচিত।