পাহাড়ি মোমোর স্বাদ বহু দিন এসে পৌঁছেছে সমতলে। তিব্বতি এবং নেপালি খাবারটি অন্য অনেক খাবারের মতো কলকাতাবাসীও সাদরে গ্রহণ করেছেন। শুধু কলকাতা নয়, শহরতলির রাস্তাতেও মোমো বিক্রি হয় পুরোদমে।
গরম এবং নরম সেদ্ধ মোমোয় তেল থাকে না বললেই চলে। ফলে, ভাজাভুজি খাওয়ার পরে যেমন অম্বল হয়ে যায় এতে তা হয় না। তা ছাড়া, কলকাতা থেকে শহরতলিতে মোমোর সঙ্গে স্যুপও পাওয়া যায়। অনেকের কাছে সেটিও বেশ পছন্দের। ফলে ‘স্ট্রিট ফুড’-এর তালিকায় মোমো ক্রমেই পছন্দের খাবার হয়ে উঠেছে। আর সেই জনপ্রিয়তা অর্জনের ফলাফল হল ফ্রায়েড মোমো, তন্দুরি মোমো, চিকেন চিজ় মোমো, গন্ধরাজ মোমো, ভেটকি মোমো।
আরও পড়ুন:
কারও কাছে মোমো সেদ্ধ খাবার, ক্ষতিকর নয়। কেউ আবার স্বাদ বদলে রোজের খাদ্যতালিকায় জুড়ে নেন রকমারি মোমো। অফিস পাড়াগুলিতে মোমো মেলে সহজেই এবং যথেষ্ট কম দামে। ফলে অনেকেই নিয়মিত মোমো খান। লোকমুখে ‘স্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত মোমো কি আদৌ স্বাস্থ্যকর। তা কি রোজ খাওয়া যায়?
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘মোমো সাধারণত ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। ময়দা হল আটার পরিশোধিত রূপ। ফলে এতে ফাইবার কম থাকে, পুষ্টিগুণও তেমন মেলে না।রোজ ময়দা খাওয়া খুব একটা ভাল নয়। এর অনেক ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।’’
মোমো নিয়মিত খেলে কোন সমস্যা হতে পারে?
মোমো কেউ নিয়মিত বা সপ্তাহে বেশ কয়েকটি দিন করে খাওয়া শুরু করলে এবং তা লম্বা সময়ের জন্য খাওয়া হলে, শরীরের নানা রকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
হজমের সমস্যা, পেটফাঁপা
· ময়দায় ফাইবারের মাত্রা বেশ কম। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ফাইবার জরুরি। ফাইবার কম থাকায় ময়দাজাতীয় খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দিতে পারে। পেটফাঁপার সমস্যাও হতে পারে।
· মোমো সাধারণত ‘স্ট্রিট ফুড’ হিসাবে খাওয়ার চল রয়েছে। কোন ধরনের তেল ব্যবহার হচ্ছে, কতটা পরিচ্ছন্ন জায়গায় তা মিলছে— তার সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া, ঝাল চাটনি রোজের খেলে অম্বল হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ে, বিপাকক্রিয়াতেও প্রভাব পড়তে পারে
· সেদ্ধ হলেও ময়দা দিয়ে তৈরি মোমো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষত ঘন ঘন খেলে এমন সমস্যা হতেই পারে।একইসঙ্গে ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে। বিশেষত ভাজা মোমো, তন্দুরি মোমো, চিজ় মোমোয় ক্যালোরির মাত্রা অনেকটাই বেশি।
· তা ছাড়া, পোড়া তেলে মোমো ভাজলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলি নিয়নিত খেলে ওজনের পাশাপাশি কোলেস্টেরলও বাড়তে পারে, যা হার্টের জন্য ঝুঁকির।
· বিপাকহারেও প্রভাব পড়তে পারে। ঘন ঘন মোমো খেলে প্রি-ডায়াবিটিস এবং ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
রক্তচাপে প্রভাব
রাস্তার খাবার হিসাবে বিক্রি হওয়া মোমোতে অনেক সময় বেশি নুন থাকে। সয়া সস, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট যোগ করা হয়। রোজের খেলে বাড়তি নুনের জন্য রক্তচাপে এর প্রভাব পড়তে পারে। ধীরে ধীরে হাইপারটেশনের ঝুঁকিও বাড়ে এতে। এ ছাড়া, মাথাধরা, অস্বস্তির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ত্বক নষ্ট হতে পারে
মোমো তেলে ভাজা না হলেও, এতে একেবারে তেল থাকে না তা নয়। নিম্নমানের তেল ব্যবহার হলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া, ভাজা, মশলাদার গ্রেভি মোমো ঘন ঘন খেলে পেটের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তারই প্রভাব পড়তে পারে ত্বকে। পেটে, লিভার ভাল না থাকলে ব্রণ হতে পারে, র্যাশও বেরোতে পারে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে।
অনন্যা বলছেন, ময়দা, ফ্যাট এবং নুনের সমন্বয়ে তৈরি মোমো খেলে তৃপ্তি হয়, ভাললাগা তৈরি হয়। এটি শরীরে ‘ডোপামিন রিওয়ার্ড সাইকেল’-কে (মস্তিষ্কের এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কোনও কাজের জন্য আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে) উদ্দীপিত করে। ফলে, বার বার মোমো খাওয়ার ইচ্ছা হয়। যার ফলে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা দেয়। হাতের কাছে থাকলেই, খেতে ইচ্ছা করে।
তা হলে মোমো কতটা খাওয়া যায়?
সপ্তাহে একবার বা মাসে ২-৩ দিন খেলে তেমন ক্ষতির সম্ভবনা নেই। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ময়দার বদলে আটা বা মিলেট দিয়ে তৈরি মোমো খাওয়া যেতে পারে। কী ভাবে মোমো তৈরি করা হচ্ছে, কতটা পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকছে তার উপর এর স্বাস্থ্যকর দিকটি নির্ভর করে।