বাদাম, আলু-ছোলা, ভাজাভুজি বা কবাবের সঙ্গে পরিমিত মদ্যপান চলতে পারে যদি তার সঙ্গে পর্যাপ্ত জল পানও করতে থাকেন। এতে শরীরের ক্ষতির সম্ভাবনা খানিকটা হলেও কমে। কিন্তু এমনও অনেকে রয়েছেন যাঁরা মদ্যপানের সময় বা তার আগে কোনও খাবার খাওয়া পছন্দ করেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে ফল কী হয়?
নিজের বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের মধ্যে কিংবা সমাজমাধ্যমে মদ্যপান নিয়ে আলোচনা হলে খেয়াল করবেন, এই দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অনেকেই খালিপেটে মদ্যপান করেছেন বা করেন। কারণ অনেক থাকতে পারে। বেড়াতে গেলে সকাল সকাল বোতল না খুললে মেজাজ ভাল হয় না অনেকের। কারও ক্ষেত্রে অল্প মদেই নেশার ঘোর আসার পকেট বাঁচানো উপায় এটি। কিন্তু খালিপেটে মদ্যপান করলে কেন দ্রুত নেশার ঘোর আসে? শরীরের ভিতরে ঠিক কী ক্ষতি হয়? এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন দিল্লির এক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ভূষণ ভোলে।
খালি পেটে মদ্যপান করলে শরীরে তার কী কী প্রভাব পড়ে?
১। অন্ত্র এবং লিভার প্রতিস্থাপনের সার্জন ভূষণ সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় বলছেন, ‘‘খালিপেটে মদ্যপান করলে তার প্রভাব সরাসরি পড়ে মস্তিষ্কে। খাবারের সঙ্গে খেলে ওই প্রভাব পড়ে কম এবং তা ধীরে ধীরে বাড়ে। কিন্তু খালিপেটে মদ্যপান করলে তা রক্তে মেশে দ্রুত। রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা আচমকা বেড়ে যায়। যা সোজা গিয়ে আঘাত করে মস্তিষ্কে।’’ আর এভাবে মস্তিষ্কে আঘাত আসার ফলে যে সব ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কেও জানিয়েছেন সার্জন। তাঁর কথায়, “এতে মস্তিষ্কের যে স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা তা নষ্ট হয়ে যায়। মাথার সঙ্গে চোখ, স্নায়ুতন্ত্র, শরীরের ভারসাম্য বা অঙ্গ সঞ্চালনের যে ভারসাম্য থাকে, নষ্ট হয় তা-ও। ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতাও কমে আসে।“
২। চিকিৎসকের মতে, যেহেতু রক্তে দ্রুত অ্যালকোহল মিশতে থাকে তাই লিভারকেও ওই অ্যালকোহলকে সরাতে দ্রুত এবং ক্ষমতার থেকেও বেশি কাজ করতে হয়, এর ফলে লিভারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যা নিয়মিত ভাবে হতে থাকলে লিভার সিরোসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে। লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩। শুধু মস্তিষ্ক বা লিভারের ক্ষতিই নয়, চিকিৎসক জানাচ্ছেন, খালিপেটে মদ্যপান করলে তা থেকে তাৎক্ষণিক বড় বিপদও হতে পারে। গা গুলনো, বমিভাব তো বটেই, ব্ল্যাকআউটও হতে পারে। ‘মারাত্মক রকমের নেশা’ হয়ে গিয়ে দীর্ঘ সময় জ্ঞান না ফিরতেও পারে।
কী খেয়াল করবেন?
১। মদ্যপান এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সামাজিকতার প্রয়োজনে যদি মদ্যপান করতেই হয়, তাহলে তার আগে হালকা সুষম খাবার খেতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর মতে, খাবার আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা আগে লিন প্রোটিন যেমন ডিমের সাদা অংশ বা মুরগির মাংস, ফাইবার রয়েছে এমন খাবার খাওয়া দরকার। কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন বাদাম, ডার্ক চকোলেট, চিজ় ইত্যাদিও অল্প পরিমাণে খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায় না। ফলে রক্তে অ্যালকোহল দ্রুত মেশে না।
২। মদ্যপানের সময়ও অল্প কিছু স্ন্যাকস খেতে বলছেন চিকিৎসক। তাতেও অ্যালকোহল রক্তে মিশবে ধীরে ধীরে। তবে অতিরিক্ত মশলাদার বা ডুবো তেলে ভাজা খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
৩। মদ্যপানের আগে এবং মদ্যপানের সময়ে জল বেশি খেলেও এই সমস্যা কমতে পারে।
আরও পড়ুন:
-
রোজ ২-৩টি সেদ্ধ ডিম খেলে মেধা বাড়ে? ডিম খাওয়ার কম জানা কিছু উপকার জেনে নিন
-
ত্বকে বয়সের ছাপ মুছতে সাহায্য করে হ্যালুরেনিক অ্যাসিড! কোন খাবারে তা পাওয়া যায়?
-
প্রতি বার খাওয়ার পরে ১০ মিনিট করে হাঁটা! তাতে ৭ রকম লাভ হতে পারে শরীরে
-
কোলাজেন বাড়িয়ে নিতে শুধু দামি প্রসাধনী কেন? প্রাকৃতিক উপায়েও তা সম্ভব!