বয়স বেশি হোক বা কম, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন যে কোনও বয়সের মানুষ! এমনটাই বলছে বেশ কয়েকটি সমীক্ষা। এটি এমন এক ভিটামিন যা প্রয়োজনের তুলনায় কমে গেলে কোমরে, কাঁধে ব্যথা, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া এমনকী অবসাদের মতোও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত সূর্যালোকের সংস্পর্শে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। বাকি ভিটামিন মেলে দুধ, কড লিভার অয়েল, তৈলাক্ত মাছ এবং বিশেষ কিছু খাবার থেকে।এর পরেও শরীরে ভিটামিনের অভাব হলে চিকিৎসকেরা সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ দেন। এতে ভিটামিন ডি২, ডি৩ দুই-ই থাকে।
ওষুধ খেলে ভিটামিনের ঘাটতি দূর হবে, এটা সহজ হিসাব। কিন্তু বাস্তবে তা হয় কী? চিকিৎসেকরা জানাচ্ছেন, কখনও কখনও ব্যতিক্রম হয়। সাপ্লিমেন্ট খেয়ে, খাবার খেয়ে, গায়ে রোদ লাগিয়েও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটে না। তার কারণ হতে পারে একাধিক।
আরও পড়ুন:
কারণ ১: যে ভুলটি অনেকেই করে বসেন, তা হল খালি পেটে বা খুব কম ফ্যাট যুক্ত খাবার খেয়ে ভিটামিন ডি-এর ওষুধ খাওয়া। ভিটামিন ডি ফ্যাটে দ্রবীভূত ভিটামিন। ফলে খাবারের তালিকায় সঠিক মাত্রায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট না থাকলে শরীরের পক্ষে ভিটামিন শোষণ করা সম্ভব হবে না।চিকিৎসকের পরামর্শ, ভিটামিন ডি-এর ওষুধ খাওয়ার আগে ডিম, দুধ বা বাদাম জাতীয় খাবার খান। কারণ, এতে ফ্যাট থাকে।
চণ্ডীগড়ের পুষ্টিবিদ লাভলিন কউরের পরামর্শ, খাদ্যতালিকায় গাজর রাখুন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে অতীতে জানিয়েছেন, গাজর ভিটামিন ডি শোষণে সাহায্য করে। ফলে গাজরের স্যালাড খেয়ে ভিটামিন ডি-এর ওষুধ খাওয়া বা ভিটামিন ডি রয়েছে, এমন খাবার তালিকায় রাখা যেতে পারে।
কারণ ২: গাট হেলথ বা পেটের স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দিলেও ভিটামিন ডি শোষণে সমস্যা হতে পারে। সেলিয়্যাক ডিজ়িজ়, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, দীর্ঘ সময় ধরে অম্বলের সমস্যা থাকলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হতে পারে। তখন ওষুধ খেলেও ভিটামিনের অভাব দূর করা যায় না।
এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক পেটের স্বাস্থ্য ভাল করার দিকে নজর দিতে পারেন। ভিটামিন ডি ইঞ্জেকশন দিতে পারেন, যাতে শরীরে দ্রুত ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়।
কারণ ৩: অতিরিক্ত ওজন, স্থূলত্ব ভিটামিন ডি-র কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। এটি ফ্যাটে দ্রবীভূত ভিটামিন। মেদ বাড়লে ভিটামিন ডি ফ্যাটের মধ্যে সঞ্চিত হতে শুরু করে, ফলে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে ওষুধ খেলেও স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না।
সমাধান হল হাঁটা এবং শরীরচর্চা করা। মেদ ঝরানোর চেষ্টা করা। ব্যায়াম করলে শরীর সচল থাকবে। ভিটামিন ডি-র কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।
কারণ ৪: ভিটামিন ডি শোষণের জন্য ম্যাগনেশিয়াম প্রয়োজন। শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি হলে প্রভাব পড়বে ভিটামিন ডি শোষণেও। এ ছাড়া স্টেরয়েড, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ বা বিশেষ কিছু ওষুধ ভিটামিন ডি শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন কলা, পালংশাক, বাদাম, দানাশস্য রাখুন দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়। স্টেরয়েড বা কোলেস্টেরলের ওষুধ নিয়মিত খেলে চিকিৎসকের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে কথা বলা জরুরি।
কারণ ৫: ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খেলেই দ্রুত ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিপূরণ হবে ভাবাটা ঠিক নয়। টানা ওষুধ খাওয়ার ১২ সপ্তাহ পরে পরীক্ষা করে দেখুন রিপোর্ট কী বলছে।
ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া জরুরি। সকালে হাঁটাহাটি করলে, রোদ লাগালেও উপকার হবে।