শশা, আপেল, আঙুরের মতো পাতলা খোসার ফল খেতে বারণ করা হয় ক্যানসারের রোগীদের। পাতলা ত্বকের ফলের মধ্যে অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এই ফলগুলি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে কেমোথেরাপি চলাকালীন খাওয়াদাওয়ায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকে।
কিন্তু তার কারণ কী?
ক্যানসার চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যে কোনও ক্যানসার রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পর তাঁদের রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যায়। নিউট্রোপেনিয়া বা শ্বেত রক্তকণীকার অভাবে ভোগে শরীর। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাঁদের। সে সময়ে পাতলা খোসার ফল খেতে বারণ করা হয় বা সতর্ক করা হয় সে বিষয়ে। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পাতলা খোসার ফল যদি ভাল করে ধোয়া না হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা না হয়, তা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই বলা হয়, পাতলা খোসার ফল ভাল করে জলে ধুয়ে খেতে পারেন। যাঁদের ধরা যাক, লিউকেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি অনেক বেশি তীব্র হয়, ফলে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা আরও বেশি মাত্রায় নেমে যায়। তাই তাঁদের জন্য বিশেষ ভাবে এ ধরনের ফল খাওয়া বারণ রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, পাতলা খোসার ফল যদি পরিষ্কার জলে ভাল করে ধুয়ে খাওয়া হয়, তা হলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। অর্থাৎ, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে রোগীদের।’’
পাতলা ত্বকের ফলের মধ্যে অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এই ফলগুলি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসকেরা।
আসলে নরম ত্বক বা পাতলা খোসার ফল এবং শাকসব্জিগুলি কীটপতঙ্গের আক্রমণে বেশি পড়ে। ফলে এই ধরনের ফল বা সব্জি উৎপাদনকারী কৃষকেরা সাধারণত কীটনাশকের উপর নির্ভর করেন। পাতলা ত্বকের ফলমূলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। যে কোনও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ পাতলা ত্বকের ফলে বেশি হয়। তাই শশা, আপেল, আঙুরের মতো ফলগুলি হজম করা সকলের পক্ষে নিরাপদ নয়। বিশেষ করে, যদি সেগুলি ঠিক ভাবে ধোয়া বা খোসা ছাড়ানো না হয়। তাই ভাল করে ধুয়ে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সরিয়ে ফেলে খেতে বলা হয় ফলগুলি।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহায়ক অধ্যাপক সৌরদীপ গুপ্তের মতে, ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে ফল খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী, তাঁর সুপারিশ করা তালিকা অনুযায়ী ফল খাওয়া উচিত। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘কেমোথেরাপির সময়ে ক্যানসারের কোষগুলিকে মেরে ফেলা হয়। সেই কোষগুলি ফেটে যাওয়ার পর তার ভিতরের সমস্ত খনিজ বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়। একই সময়ে যদি ফলের মাধ্যমে সেই খনিজগুলি বাইরে থেকে রোগী নিতে থাকেন, তাতে এই খনিজের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যেতে পারে। সে কারণে রেডিয়েশনের সময়ে সাইট্রাস জাতীয় ফল খেতে বারণ করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই। তা ছাড়া কয়েক ধরনের ফলের মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা কেমোথেরাপির ওষুধগুলির সঙ্গে মিশে বিক্রিয়া করতে থাকে। উপরন্তু কেমোর পর মুখে ঘা হয়, কিছু ফল খেলে সেগুলি আবার বেড়ে যায়।’’