পাঁচ বছর আগের পরিস্থিতি আমাদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক, ঘরে ঘরে অসুস্থতা, লকডাউন... এই পরিস্থিতি ফিরে আসুক তা কেউই চায় না। কিন্তু সম্প্রতি সারা দেশেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বাড়ছে। যদিও এখনও পর্যন্ত তা উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছয়নি, কিন্তু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। গত এক মাসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ভারতেও গত কয়েক দিনে চারগুণ বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এ নিয়ে এখনই চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছে। যাঁরা কোমর্বিড অর্থাৎ দীর্ঘ দিন ধরে কোনও রোগে ভুগছেন, তাঁদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ।
পরিস্থিতি কেমন?
বারেবারে করোনাভাইরাস ফিরে এলে মানুষের আতঙ্কিত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। বিষয়টির ব্যাখ্যায় মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “কোভিড আগেও ছিল, কিন্তু ২০২০ সালে তার একটি বিশেষ ভ্যারিয়েন্ট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেটি অতিমারির আকার নেয়। ২০২৩-’২৪ সালেও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু গুরুতর কিছু ঘটেনি সে বার। তবে এ বারের ভ্যারিয়েন্টটি জোরালো। প্রতিটি ভাইরাসেরই মিউটেশন হয়। বিবর্তনের ফলে ভাইরাসের নতুন শাখাটির সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা আগের চেয়ে বেশি। কতটা বেশি সেটা বুঝতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।”
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের ওমিক্রন শাখার আওতায় এনবি১.৮.১, এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন.১ উপশাখার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এ দেশে। এর মধ্যে প্রথম দু’টি উপশাখাকে নজরদারির আওতায় এনেছে হু (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)। জানা যাচ্ছে, সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা এনবি১.৮.১ এর অনেকটাই বেশি।
উপসর্গ
আগের বার যে ধরনের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল এ বারও ঠিক তাই। সাধারণ সর্দি, জ্বরের ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থাকে। “সর্দি-কাশি, জ্বর, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, বমি— মোটের উপর এগুলোই উপসর্গ। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে অসুখ সেরেও যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোভিডের জন্য অতিসঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখানে,” বললেন ডা. তালুকদার। এর আগে কোভিড হয়েছে কি না দেখার জন্য যে পরীক্ষা হত, তাতে পজ়িটিভ বা নেগেটিভ জানা যেত। এখন চিকিৎসকেরা রেসপিরেটরি প্যানেল টেস্ট করতে বলেন। সেখানে ১০-১২ রকমের সংক্রমণের একটা তালিকা থাকে। সেই তালিকায় রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচওয়ান এনওয়ান ভাইরাস, হিউম্যান অ্যাডিনোভাইরাস, হিউম্যান রাইনোভাইরাস, কোভিড ইত্যাদি রয়েছে। মানুষের মুখের লালা বা থুতু নিয়েই এই পরীক্ষা করানো হয়। “কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে, কেউ যদি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ নিয়ে আসেন, তা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে রেসপিরেটরি প্যানেল টেস্ট করতে বলেন। এই একটা পরীক্ষাতেই জানা যাবে রোগী কোন ভাইরাসে আক্রান্ত,” বললেন ডা. তালুকদার।
এখন প্রয়োজন
গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে হু। এখনও কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, অতিমারির দিন ফিরে পেতে না চাইলে গোড়াতেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। রাস্তাঘাটে বেরোনোর সময়ে মাস্ক পরা, বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়া, বাইরের জামাকাপড় বদলে ফেলা... যদি সর্দিকাশির সঙ্গে জ্বর থাকে তা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জ্বরজারি হলে বাড়িতেই থাকবেন।
কোমর্বিডিটি থাকলে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। ক্যানসার, ডায়াবিটিস, কিডনি, ফুসফুসের রোগ থাকলে সেই ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হবে। বয়স্ক ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গরমের ছুটি শেষের দিকে। ফলে আগামী দিনে বাচ্চাদের মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। কোনও বাচ্চার সর্দিকাশির উপসর্গ দেখা দিলে তাকে সে সময় স্কুলে পাঠানো যাবে না।
২০২০-তে এই রোগ যখন মাথাচাড়া দেয়, তখন যে আতঙ্ক ছিল, তা এখন না থাকলেও গোড়াতে সাবধান হওয়াই শ্রেয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)