পুরুষের থেকে মহিলাদের থাইরয়েডের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অন্তত তেমনই মনে করে আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন (এটিএ)। তারা জানাচ্ছে, যদি ১০০ জনে এক জন পুরুষ থাইরয়েড আক্রান্ত হন, তবে ওই ১০০ জনে অন্তত ৫-৮ জন মহিলার থাইরয়েডের সমস্যা থাকবে। শুধু তা-ই নয়, এটিএ-র সমীক্ষা এবং গবেষণাজাত তথ্য বলছে, প্রতি ৮ জন মহিলার মধ্যে অন্তত এক জন তাঁর গোটা জীবনে কখনও না কখনও থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। তারা এ-ও বলছে যে, এই মহিলাদের মধ্যে অন্তত ১০-২০ শতাংশের থাইরয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই!
এমন যেখানে পরিস্থিতি আর যেহেতু থাইরয়েড হল সেই হরমোন, যা এক বার ভারসাম্য হারালে গোটা শরীরেরই সুস্থতা বিপন্ন হতে পারে, সেখানে বাড়তি সতর্ক থাকা জরুরি। যাতে থাইরয়েডের সমস্যা দানা বাঁধতে শুরু করার আগেই রাশ টেনে ধরা যায়। আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত চিকিৎসক ইভ ফেইনবার্গ জানিয়েছেন, কোন কোন লক্ষণ দেখলে মহিলারা থাইরয়েডের ব্যাপারে সতর্ক হবেন।
১। অকারণ ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি
শরীরের ওজন কেন কমছে বা বাড়ছে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা অল্পবিস্তর সকলেরই থাকে। মনে মনে সকলেই জানেন, কোন অনিয়মটি করেছেন, যার জন্য ওজন বাড়ছে। বা কোথায় রাশ টেনেছেন, যার জন্য ওজন কমার সুফল পাচ্ছেন। যদি দেখেন, তেমন কোনও নির্দিষ্ট কারণ ঘটেনি অথচ ওজন কমছে বা বাড়ছে, তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। মুশকিল হল ওজন বাড়লে সতর্ক হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ওজন কমলে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা বিশেষ করেন না কেউ। বিষয়টিকে ভাল বলেই মনে করেন। কিন্তু মুশকিল হল হাইপোথাইরয়েডিডজ়মে ওজন বাড়লেও হাইপারথাইরয়েডিজ়ম হলে ওজন কমে। কারণ হাইপোথাইরয়েডিজ়মে থাইরয়েড হরমোন ঠিক মতো কাজ না করায় বিপাকের হার কমে যায়। অন্য দিকে হাইপারথাইরয়েডিজ়মে থাইরয়েড হরমোন অতি সক্রিয় হয়ে বিপাকের হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরের সমস্ত ফ্যাট ভাঙতে থাকে। সময়ে সচেতন না হলে সেই অসুখ বাড়তে পারে।
২। রক্তচাপে অস্বাভাবিকত্ব
থাইরয়েড হরমোন যেমন বিপাকের হার নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনই হার্টের সঙ্গেও সমানে যোগাযোগ রেখে চলে। এ হরমোনের এতটাই ক্ষমতা যে, কত জোরে হৃৎস্পন্দন হবে, তা-ও প্রভাবিত করতে পারে। যদি হাইপোথাইরয়েডিজ়ম হয় তবে হৃৎস্পন্দন ধীরগতিতে হবে। ফলে তার প্রভাব পড়বে রক্তচাপেও। অন্য দিকে হাইপারথাইরয়েডিজ়মে হবে ঠিক তার উল্টোটা। তাই সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩। টয়লেটে দিনে কত বার যেতে হচ্ছে?
যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজ়মে বিপাকের হার কমে, তাই তার প্রভাব পড়ে অন্ত্রেও। সেক্ষেত্রে হয়তো দেখবেন, আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হচ্ছে। আবার হাইপারথাইরয়েডিজ়মে হবে এর উল্টোটা। সেক্ষেত্রে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কোষ্ঠে তরল ভাবও থাকবে বেশি।
৪। ক্লান্তিবোধ, মেজাজে বদল
হাইপার বা হাইপো— থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে শরীরে ক্লান্তিবোধ কাজ করবে বেশি। সারা দিনের যে কাজ ভালবেসে করতেন, সেই কাজই এখন ক্লান্তিকর লাগবে। এমনকি, থাইরয়েডের প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কেও। বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজ়মে হতাশা একটি বড় লক্ষণ। অন্য দিকে, হাইপারথাইরয়েডিজ়মে এই প্রভাব পড়বে অন্য রকম ভাবে। এ ক্ষেত্রে মনে হতে পারে, প্রতি মহূর্তে আপনার মাথায় লক্ষ লক্ষ ভাবনা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা থেকে আসতে পারে উদ্বেগ, বিরক্তিও। এমন মনে হলে অবিলম্বে থাইরয়েডের হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।
৫। চুল এবং ত্বকের সমস্যা
হাইপোথাইরয়েডিজ়মে চুল এবং ত্বকে শুষ্ক ভাব আসে। যদি আচমকা দেখেন চুল শুষ্ক হয়ে ভেঙে যাচ্ছে, ত্বকে এক মুহূর্ত ময়েশ্চারাইজ়ার না দিয়ে থাকা যাচ্ছে না, কিংবা ভ্রুর চুল উঠে যাচ্ছে, তবে অবিলম্বে থাইরয়েডের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। হাইপারথাইরয়েডিজ়মেও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে।
৬। সব সময়ে কি ঠান্ডা লাগে?
সব সময়ে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা? অল্প তাপমাত্রা নামলেই কি শীত করে? এটিও হাইপোথাইরয়েডিজ়মের লক্ষণ হতে পারে। যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজ়মে শরীরে রক্তসঞ্চালন ধীর গতি হয়ে যায়, তাই ঠান্ডা লাগে বেশি। অন্য দিকে, হাইপারথাইরয়েডিজ়মে হবে ঠিক এর উল্টোটা। এই রোগ হলে আক্রান্ত মানুষটি গরম সহ্য করতে পারবেন না। ঘামবেনও বেশি।
৭। শরীরের নীচের অংশে ফোলাভাব
যদি হঠাৎ দেখেন, পায়ের গোছ, হাঁটু, পায়ের পাতা এবং নিতম্বে অতিরিক্ত ফোলা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে, তবে বুঝতে হবে শরীরে জল জমছে। যা হাইপোথাইরয়েডিজ়মের লক্ষণ হতে পারে।