ভোলেবাবাকে দেবতাদেরও দেবতা হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই তিনি দেবাদিদেব নামে পরিচিত। তাঁর উপাসনা যদি সঠিক উপায় মেনে, নিষ্ঠাভরে করা যায়, তা হলে ফলপ্রাপ্তি নিশ্চিত। যদিও শিবকে তুষ্ট করা কঠিন কাজ নয়, তবে পবিত্র মনে শিবকে না ডাকলে ফলপ্রাপ্তিতে বাধা আসা স্বাভাবিক। সোমবার দিনটি শিবের বার নামে পরিচিত। এই দিন শিবের উপাসনা করার জন্য আদর্শ। তার উপর এই দিন যদি শিবের ব্রত পড়ে, তা হলে তো কথাই নেই। মন দিয়ে এই ব্রত পালন করলে মহাদেব নিশ্চই আপনার কথা শুনবেন।
প্রতি মাসের যে সোমবার ত্রয়োদশী তিথি পড়ে, সেই সোমবার পালিত হয় প্রদোষ ব্রত। এক মাসে দু’বারও এই ব্রত পালনের দিন পড়তে পারে, কৃষ্ণপক্ষে এবং শুক্লপক্ষে। প্রদোষ শব্দের অর্থ হল সন্ধ্যার ঠিক আগের সময়, অর্থাৎ গোধূলি। এই সময়টি শিবের উপাসনা করার জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে যে সোমবার প্রদোষ ব্রত পড়ে, সেই দিন গোধূলিতে শিবের মাথায় জল ঢাললে দারুণ ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
নভেম্বরে কবে পড়েছে প্রদোষ ব্রত?
৩ নভেম্বর পড়েছে প্রদোষ ব্রত। ত্রয়োদশী তিথি শুরু হচ্ছে সোমবার ভোর ৫টা ৭ মিনিটে, তিথি শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫ রাত ২টো ৫ মিনিটে। মঙ্গলবার তিথি থাকলেও সোমবারই এই ব্রত পালন করতে হবে।
সোম প্রদোষ ব্রত পালনের নিয়ম:
- এই দিন যেহেতু ভোরবেলা তিথি শুরু হয়ে যাচ্ছে তাই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে নিতে হবে। তার পর শুদ্ধ বসন পরে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করতে পারলে খুব ভাল হয়।
- স্নানের পর বাড়িতে থাকা শিবলিঙ্গের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে হবে। তার পর সেটির সামনে একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন সেই প্রদীপ যেন নিবে না যায়। প্রদীপে থাকা ঘি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটিকে নিবতে দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:
- এই দিন উপবাস রাখতে হবে। গোধূলি লগ্নে শিবের মাথায় জল ঢালার পর উপোস ভাঙা যাবে। তবে উপোস রাখতে না পারলে নিরামিষ আহারও গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু চালের তৈরি কোনও জিনিস এই দিন গ্রহণ না করাই ভাল।
- সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে বেলপাতা সহযোগে শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে। এই ক্ষেত্রে দুধ, দই, ঘি, মধু ও চন্দন মিশিয়ে শিবের অভিষেক করতে পারলে খুব ভাল হয়। তার পর গঙ্গাজল দিয়ে শিবলিঙ্গটিকে ধুয়ে দিতে হবে। বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, আকন্দ ফুল প্রভৃতি দেওয়া যেতে পারে। শেষে শিবের সামনে প্রদীপ ও ধূপকাঠি জ্বালাতে হবে। মন যা চাইবে, সাধ্যমতো সেই ভোগই বাবাকে অর্পণ করবেন। মহাদেব তাতেই তুষ্ট হবেন। জল ঢালার সময় ‘ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্রটি পাঠ করা আবশ্যিক। সব হয়ে গেলে হাত জোড় করে মহাদেবকে মনোস্কামনা জানাবেন।
- এর পর চরণামৃত খেয়ে ব্রত ভাঙতে হবে। তিথি যেহেতু থাকছে, তাই রাত্রিবেলা শিবের মাথায় আবারও জল ঢালা যেতে পারে। এই দিন সারা রাত শিবের সামনে একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে পারলে খুব ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
ব্রত পালনে ফলাফল:
সোম প্রদোষ ব্রত পালন করলে সকল মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। মনের মতো স্বামী লাভ হয়। সম্পর্কের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি হয়। জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা লাভ করা যায়। শিবের কৃপায় সকল ঝঞ্ঝাট কেটে গিয়ে সুখের সময় শুরু হয়।