কোনও কুন্ডলীতে রাহু বৃহস্পতি ও কেতু বৃহস্পতি যদি এক রাশিতে বা এক ভাবে অবস্থান করে, তখন সেই কুন্ডলীতে গুরুচন্ডালী যোগ রয়েছে বলা যাবে। প্রখ্যাত জ্যোতিষী ডঃ বি, ভি, রমন বলেছেন যে বৃহস্পতি যদি রাহুর নক্ষত্রে অবস্থা করে তাহলেও গুরু-চন্ডালী যোগ বলা যাবে। গুরু-চন্ডালী যোগ অনেকটা দুধে চোনা মেশানোর মত।
সাধারণত এই যোগ যদি লগ্নে থাকে মানুষ নানা রকম অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কেউ কেউ ভয়ঙ্কর স্বার্থপর ও মিথ্যা অহঙ্কার সর্বস্ব হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ে গুরু-চন্ডালী যোগ থাকলে, এরা মিথ্যাভাবে বা প্রতারণা করে, লোককে ঠকিয়ে অন্যের অর্থ তছরূপ করে থাকে। পঞ্চমে ও নবমে এই যোগ থাকলে, জাতক প্রতারক ও ভণ্ড হয়। গুরুচণ্ডালী নিয়ে উপরের মতটা হয়তো অনেকটাই সত্য।
আবার গুরু-চণ্ডালী নিয়ে বিপরীত মত যথেষ্ট শক্তিশালী, “সর্বাথচিন্তা” তে বলা হয়েছে যে, বৃহস্পতি যদি রাহু বা কেতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে, বুধ বা শুক্র দ্বারা দৃষ্ট হয়, তাহলে নীচু শ্রেণীতে জন্ম হলেও সর্বজ্ঞ পন্ডিত বা জ্ঞানী হবে এবং শাস্ত্রজ্ঞ হবে।
গুরু-চন্ডালী যোগে বৃহস্পতি ও রাহু যদি খুব কাছাকাছি মানে ১০০ডিগ্রীর মধ্যে থাকে, তাহলে এর প্রভাব যতটা থাকে, কিছুটা দূরে মানে ১৮০ডিগ্রী তফাতে থাকলে অতটা থাকে না। ০ডিগ্রী দূরে থাকলে এর পাপভাব প্রায় থাকে না। বাস্তবে দেবগুরু বৃহস্পতি রাহু বা কেতুর সঙ্গে থাকলে বৃহস্পতির শুভত্ব অনেকটা কমে যায়।
আমরা জ্যোতিষেরা গুরুচন্ডালী যোগে যে যে ফল পর্যবেক্ষণ করেছি তা একটু পরে আসছি-
১) এই যোগে অনেক সময় জাতক জাতিকা ঘোষণা করে নাস্তিক হয়।
২) অনেক সময় জাতক ধর্মান্ধ হয় গোড়া ও মৌলবাদী হয়, সে অন্য গুরু মত বা পথ কে প্রবল ভাবে অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকে।
৩) জাতক জাতিকা ধর্ম পথে সেই সব জিনিসে আকৃষ্ট হয় যার দ্বারা, টাকা-পয়সা কামানো যাবে। যার জন্য তুকতাক, ঝাড়ফুঁক ও ষটকর্ম, কালাযাদু ও নানা রকম তান্ত্রিক ক্রিয়া কলাপ। অনেক সময় মঠ মিশনের অধিকর্তা হয়।
৪) এই যোগের মানুষেরা অনেক সময় ভাল বেদজ্ঞ বা শাত্রজ্ঞ জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু আড়ালে বা প্রকাশ্যে মদ্যপান করেন, ধূমপান করেন, গাজা-চরস আসক্তি হয়ে পড়েন, উগ্র তান্ত্রিক সহযোগে দিন কাটান।
৫) এই যোগের মানুষেরা সব সময় ধর্ম কথা বলতে ভালবাসেন, অনেক সময় মঠ মিশনে দীক্ষা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ব্রহ্মচারী হওয়ার ভান করেন এবং আরও তাড়াতাড়ি গেরুয়া হাতাবার ধান্দা করে থাকেন।
৬) এদের অনেকে আবার ভালভাবে প্রাচীন বেদ-বেদান্ত, পুরান, পুরাতাত্বি্ক, ও দর্শন চর্চা করেন, বাইরের দিকের অনুশাসণ ভাল ভাবে মেনে চলেন।
নিঃসন্দেহে বলা চলে একটা কয়েন বা মুদ্রা দুটো দিক থাকে, গুরুচণ্ডালী যোগে কেউ কেউ গঠনমূলক পথে চলে সত্যিকার জীবন চর্চা করে থাকেন বিশেষ করে তাদের জন্মছকে প্রবলভাবে বৃহস্পতি বলবান ও শক্তিশালী থাকে। তাদের নবম ভাবও নবম পতি শুভ ভাবে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের জন্মছকে কেতু দ্বাদশে বা মোক্ষ কারক স্থানে থাকে। তাদের দশম স্থান ও লগ্ন শুভ গ্রহদ্বারা দৃষ্ট হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy