Advertisement
E-Paper

দেবী কালীকার নগ্নিকারূপের শাস্ত্রগত ব্যাখ্যা

দেবী কালীকার প্রচলিত যে রূপটি পূজিত হয়, সেইরূপটির নাম দক্ষিণাকালী। বলা হয়, এই রূপটি এনেছেন তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০

দেবী কালীকার প্রচলিত যে রূপটি পূজিত হয়, সেইরূপটির নাম দক্ষিণাকালী। বলা হয়, এই রূপটি এনেছেন তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। এটি তাঁরই মানসচক্ষে পাওয়া মূর্তি। এ বার তাঁর কল্পিত মূর্তির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা কী আছে বা তার তাৎপর্য কী, সেটা দেখে নেওয়া যাক।

(১) কালী শব্দটির ব্যাখ্যা: ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ ‘কালী’। এই শব্দের অর্থ ‘কালো’ বা ‘ঘোর বর্ণ’।

(২) দক্ষিণাকালী কেন বলা হয়: শাস্ত্রকারেরা বলছেন, দক্ষিণদিকের অধিপতি যম কালীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করেছিলেন, সে জন্য তাঁর নাম দক্ষিণাকালী।

(৩) কালীর পদতলে শিব: এখানে মা কালী শবরূপী শিবের উপর দণ্ডায়মান। শিব হচ্ছেন স্থির বা নীরব। আর কালী হচ্ছেন ‘গতির প্রতীক’। এখানে শিব দেখতে সাদা আর মায়ের রূপ কালো বা ঘন নীল। সাধারণত যাঁরা যোগী বা সাধক, তাঁরা সাধন কালের ‘কূটস্থ’ দর্শনকালে শুভ্র রং বেষ্টিত কালো দেখে থাকেন।

(৪) দেবীকে ঘন কালো দেখনোর কারণ কী: এখানে কালো মানে বর্ণাতীত। সকলেই জানেন কালোর মধ্যে সব বর্ণ মিলে যায়। কালো জগতের আলো। সাধকেরা দেবীকে অনেক সময় গাঢ় নীল বর্ণের দেখে থাকেন, কারণ তিনি গাঢ় নীল আকাশের মতোই অনন্ত অসীম।

(৫) তিনি মুক্তকেশী: তাঁর মাথার ঘন কালো চুল বাঁধা অবস্থায় থাকে না। যোগশাস্ত্রে মুক্তকেশ বৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি চিরবৈরাগ্যের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা লৌকিক বা জাগতিক সকল বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন।

(৬) দেবীকে ত্রিনয়নী দেখানো হয়েছে কেন: ত্রিনয়ন হচ্ছে সূর্য, চন্দ্র ও সমস্ত রকম অগ্নির প্রতীক। তিনি আমাদের ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’ অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোতে বা জ্যোতিতে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আবার সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের অধিপতি। অর্থাত্ তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও অবস্থান করবেন।

(৭) দেবী সাদা দাঁত দ্বারা রক্তবর্ণ জিহ্বাকে কামড়ে ধরেছেন: এখানে লাল রং রজো গুণের প্রতীক আর সাদা সত্ত্ব গুণের। দাঁতের দ্বারা জিহ্বা স্থির রেখে বলতে চাওয়া হয়েছে ত্যাগের দ্বারা ভোগকে জয় করা।

(৮) দেবীর মুণ্ডমালিনীর ব্যাখ্যা কী: দেবীর গলায় ৫০টি পিশাচের কাটা মুণ্ডের মালা বা হার। প্রকৃতি অর্থে ৫০টি কাটা মুণ্ড ৫০টি অক্ষর, ১৪টি স্বরবর্ণ আর ৩৬টি ব্যঞ্জন বর্ণ। এখানে প্রতিটি বর্ণ মানে প্রতিটি বীজমন্ত্র। শব্দ ব্রহ্ম। তাই এখানে অক্ষর রূপ বীজমন্ত্রগুলি শক্তির উৎস। দেবী এখানে স্বয়ং শব্দব্রহ্মরূপিণী।

(৯) দেবীর কোমরবন্ধ মানুষের কাটা রক্তঝরা হাত দিয়ে তৈরির তাৎপর্য: এখানে কাটা হাত কর্ম বা কর্মফলকে বোঝানো হয়েছে। তাই কাটা হাত কর্মের প্রতীক। মানুষের মৃত্যুর পর জীবাত্মা দেবীর অঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে থাকে, তিনি আবার সমস্ত কর্মের ফলদাত্রী। পরবর্তী জন্মে তাদের কর্মফল অনুসারে বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন গর্ভে জন্মগ্রহণ করে থাকে।

(১০) দেবী নগ্নিকা বা দিগম্বরীর তাৎপর্য: এক দিকে দেবী বিশ্বমধ্যে, আবার অন্য দিকে তিনি বিশ্বব্যাপী ও বিশ্বাতীত। যাঁর স্বরূপ এমন, তাঁকে কি কোনও বস্ত্র দিয়ে আবরিত করা সম্ভব! কার কী এমন সাধ্য আছে তাঁর ওই রকম বস্ত্র তৈরী করার? তাই তিনি ঋষি কল্পনায় দিগম্বরী বা নগ্নিকা।

Kali Puja 2018 Kali Puja Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy