Advertisement
E-Paper

বন্দুক ফেলে হাতে নিলেন পেনসিল, স্কুলে ফিরলেন গঢ়চিরৌলির ১০৬ মাওবাদী, মাঝবয়সে শুরু নয়া অধ্যায়

কারও প্রথম শ্রেণি, তো কারও দ্বিতীয় শ্রেণির পরেই চুকেছিল স্কুলের পাট। শৈশবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বন্দুক। মাঝবয়সে তাঁরা অস্ত্র ফেলে তুলে নিলেন খাতা-পেনসিল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৬
Maoist

স্কুলে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা। ছবি: সংগৃহীত।

বইয়ের বদলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল বন্দুক। দুরন্ত শৈশব কেটেছে গঢ়চিরৌলির ঘন জঙ্গলে। এখন কারও বয়স ৫৫, কেউ ৪৮। হঠাৎ রুটিন বদলে ফেলেছেন তাঁরা সকলে। রোজ সকালে স্কুলে যাচ্ছেন। সামনে তাঁদের পঞ্চম শ্রেণির প্রবেশিকা পরীক্ষা। তার জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। তাঁরা আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী। মহারাষ্ট্র সরকারের উদ্যোগে নতুন করে জীবন শুরু করছেন এই ১০৬ জন।

বনিতা জুরে ওরফে ঘিটসো। যৌবনের দুই দশক কাটিয়েছেন গঢ়চিরৌলির ঘন জঙ্গলে। মাওবাদী কার্যকলাপে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৯৩ সালের ২২ মার্চ। এখন বনিতা ৫৫। গত ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। এই বয়সে খাতা-পেনসিলের সঙ্গে যুদ্ধ কেমন লাগছে? হাসি খেলে যায় প্রৌঢ়ার মুখে। বললেন, ‘‘এ তো আমার কাছে নতুন জগৎ। সব কিছু কেমন বিস্ময়ের।’’

বনিতার মতো আরও ১০৫ জন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীর সঙ্গে স্কুলের সম্পর্ক ছিল না। কারও প্রথম শ্রেণি তো কারও দ্বিতীয় শ্রেণির পরেই চুকেছিল স্কুলের পাট। শৈশবে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। বয়স তখন ওই ১০ বা ১১। বনিতাদের পড়ানো হয়েছিল আন্দোলনের পাঠ। কিন্তু খাতায়-কলমে তাঁরা সকলেই নিরক্ষর।

আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা যাতে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে মহারাষ্ট্র সরকার। ‘প্রজেক্ট সঞ্জীবনী’র মাধ্যমে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা হচ্ছে। যাঁরা কোনও দিনও স্কুলের চৌকাঠ মাড়ানোর সুযোগ পাননি, তাঁদের ব্ল্যাকবোর্ড, চক-ডাস্টার, খাতা-পেনসিলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সরকার। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্রে। চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তার পর আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা বসবেন পরীক্ষায়। পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা। শিক্ষকদের লক্ষ্য, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে সকল ছাত্রছাত্রীকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে ফেলা।

তবে মধ্যবয়সি নাংসু ওরফে গিরিধর তুমরেটি পাঁচেই থামতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি। পড়াশোনায় ইতি হয়েছিল। কিন্তু এ বার আর ছাড়ছি না। পড়াশোনা করে চাকরি করার স্বপ্ন দেখছি আমি।’’ গিরিধরের সঙ্গে তাঁর ৫২ কমরেড আত্মসমর্পণ করেছেন মাসকয়েক আগে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গিরিধরের স্ত্রী সঙ্গীতা ওরফে জানকীও। ৩৯ বছরের বধূ মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হন ২০০২ সালে। তবে ২০২৪ সালের জুন মাসে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। ক্লাসঘরের বেঞ্চে বসে সঙ্গীতা বলেন, ‘‘স্কুল ছেড়ে দলে যোগ দিয়েছিলাম... আবার ক্লাসরুমে ফিরলাম।’’ সঙ্গীতার ইচ্ছা, হাতের কাজ শিখে স্বনির্ভর হবেন। সেলাইয়ের কাজ খুব ভাল করেন। প্রশাসনও চাইছে, প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব হয়ে গেলে ওই কাজেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাঁকে। তার আগে ১০৬ জনকে বইমুখী করাই সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে মনে করছে প্রশাসন।

Ex maoists Maharashtra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy