Advertisement
E-Paper

শিলচরে জেল আদালত, মুক্ত ১৪ বন্দি

মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জেল পরিদর্শনে যান, তা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। লোক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বাদী-বিবাদীর বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার ঘটনা কয়েক বছর ধরেই চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩

মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট জেল পরিদর্শনে যান, তা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। লোক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন বাদী-বিবাদীর বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার ঘটনা কয়েক বছর ধরেই চলছে।

তা বলে মুখ্য বিচাররবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্তদের নিষ্কৃতি দিতে জেলে হাজির হবেন! তা ভাবা যায়নি।

প্রজাতন্ত্র দিবসে সেটাই ঘটল শিলচর কেন্দ্রীয় কারাগারে। জেলা আইনি সহায়তা কর্তৃপক্ষ (ডিএলএসএ) আয়োজন করে জেল আদালতের। শিলচরে তা এই প্রথম বলে জানিয়েছেন জেল সুপার হরেন চন্দ্র কলিতা। তাঁর অফিসেই বসেছিল বিশেষ আদালত। শুধু জেল থেকে মুক্তি নয়, একেবারে মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে বিস্মিত অভিযুক্তরাও।

প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব জানিয়েছেন, বিপক্ষকে না ডেকেই ১১ জনের মামলার নিষ্পত্তি হয় জেল আদালতে। আরও ৩ জনকে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। জামিনদারের জন্য কিছু দিন ধরে তারা চার দেওয়াল থেকে বেরতে পারছিলেন না। গরুচুরির অভিযোগে ধৃত সাব্বির আহমেদ লস্কর জামিনদার পাচ্ছিল না। জেল আদালত তাকে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তির কথা বলে পরে মামলা থেকেও রেহাই দিয়ে দেয়। সাব্বিরের দাবি, তিনি এলাকারই পরিচিত এক জনের কাছে ৩০০ টাকা পেতেন। ধার নিয়ে বহু দিন ধরে ফিরিয়ে দিচ্ছিল না। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে টাকার জন্য চেপে ধরলে একটি গরু দিয়ে যায়। কথা হয়, টাকা মিটিয়ে গরু ফিরিয়ে নেবে। তার আগেই গরুর মালিক এসে জানান, এটি চুরির গরু। অন্য দু’জনের সঙ্গে তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। মূল অভিযুক্তরা জামিনে বেরিয়ে গেলেও জামিনদারের অভাবে সাব্বির জেলেই পড়ে থাকে। আত্মীয়-স্বজন সবাই দরিদ্র, অশিক্ষিত। নিজস্ব বাড়িঘর নেই। কোথায় পাবে বাড়ির দলিল বা নগদ অর্থ! সব জেনে মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নিত্যানন্দ তালুকদার তাঁকে দু’মাসের কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে দেড়মাস কেটে যাওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি পুরো নিষ্কৃতি পাবে শুনে খুশিতে কেঁদে ফেলে চার সন্তানের পিতা সাব্বির আহমেদ লস্কর।

বিহাড়ার সুকান্ত নাথ জেল আদালতে দাঁড়িয়ে করজোড়ে বলে, ‘‘সিলিন্ডার চুরিতে ধরা পড়ে সবার সামনে মিথ্যে বলেছি। থানাতেও চুরির কথা স্বীকার করিনি। কিন্তু আজ বলছি, বাধ্য হয়েই চুরিটা করেছিলাম।’’ সুকান্ত মিষ্টির দোকানের কর্মী। তার কথায়, ‘‘দোকানের মজুরিতে খাওয়া-পরার খরচ মেটানো কষ্টকর। স্ত্রী তখন সাতমাসের গর্ভবতী। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার টাকা জোগাব কোথা থেকে, তা ভেবেই সিলিন্ডার সরিয়ে ফেলি।’’ সেই অপরাধে শাস্তি যা-ই হোক, সুকান্ত একবার তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে দেখে আসতে চায়। জেল আদালত তাঁকে আরও এক মাস জেলে রেখে মামলা থেকে রেহাইয়ের নির্দেশ দেয়। সে কথা শুনে কান্নাকাটি জুড়ে দেয় সে। ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সচিব নিশান্ত গোস্বামীকে বলেন, ‘‘তত দিনে স্ত্রীর প্রসবের সময় চলে আসবে। আমাদের আত্মীয়-পরিজন বলতে কেউ নেই।’’ শেষ পর্যন্ত তাঁকে তখনই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় জেল আদালত। বিস্কুট চুরির দায়ে ধৃত জয়নুল শেখেরও স্বীকারোক্তি, ‘‘পেটের ক্ষিদে মেটাতে বিস্কুট খেয়ে ফেলেছিলাম। আর এমন করব না।’’ জেলের সঙ্গে মামলা থেকেও মুক্তি পায় জয়নুল।

ছাগল চুরির মামলায় ৬ মাস ধরে বন্দি সইদপুরের সঞ্জু হোসেন লস্কর। মোষ চুরির দায়ে ধৃত বীরেশ রি-রও জেলে থাকার ৬ মাস পেরিয়ে গিয়েছে। দু’জনকেই কাল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চাতুর্যপ্রসাদ তালুকদার। ব্যাটারি চুরির দায়ে ৬ মাস জেল খেটে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাবে রিপন হোসেন মজুমদার।

সব বন্দিই মুক্তি পেয়ে দ্রুত বাড়ি যেতে চায়, এর ব্যতিক্রমও ধরা পড়ে গত কালের বিশেষ আদালতে। মামলা থেকে নিষ্কৃতি মিলতে চলেছে দেখে আসানুল হক বড়ভুঁইঞা আগেভাগে জানিয়ে দেয়, নিরাপত্তাহীনতার জন্য এখন সে জেল থেকে বেরতে চায় না। নিজেই বিচারকেদর আবেদন জানান, আরও কিছু দিন জেলে থাকার সুযোগ দেওয়া হোক। বিচারকরা আবেদন মঞ্জুর করেন। ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির জেল আদালতে গত কাল উপস্থিত ছিলেন তাঁদের আইনজীবী তুহিনা শর্মা এবং আবদুল আলওয়াল বড়লস্করও। আসলে অভিযুক্তরা আইনজীবীর ব্যয়ভার বহন করতে পারছিল না বলে অথরিটিই দুই আইনজীবীকে তাদের সহায়তার জন্য নিযুক্ত করেছিল। একসঙ্গে ১৪ জনের মুক্তির রায়ে খুশি জেল সুপার হরেনবাবুও। তিনি জানান, শিলচর সেন্ট্রাল জেলে ৪৭৯ জনকে রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। সে জায়গায় গত কাল ছিলেন ৫৫৬ জন।

Silchar Prisoner
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy