বনচিয়া দেবী। ৬৮ বছর বয়স। বিহারের বৈশালী জেলার বাসিন্দা।
মিন্টু পাসওয়ান। ৪১ বছরের মিন্টুর বাড়ি বিহারের আরা জেলায়।
আজ সুপ্রিম কোর্টে ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জনের বিরুদ্ধে মামলার এজলাসে বিহারের এই দুই ভোটারকে হাজির করালেন মামলাকারীরা। যদিও বিহারের খসড়া তলিকা অনুযায়ী, দুই ব্যক্তিই মৃত।
গত ১ অগস্ট বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই ভোটার তালিকায় কী ভাবে যোগ্য ভোটাররা বাদ পড়েছেন, তা বোঝাতে আজ মামলাকারীরা নাটকীয় ভাবে বিহারের দুই ভোটারকে হাজির করেছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের কাউকে নোটিস পাঠিয়ে, বক্তব্য শোনা হয়নি।
বিহারে ভোটার তালিকা বিশেষ পরিমার্জনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড বিবেচনা করতে রাজি হয়নি। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ আধার কার্ডের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের যুক্তি কার্যত মেনে নিয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্তের মন্তব্য, আধার কার্ড দেশের নাগরিকত্বের অকাট্য প্রমাণ নয়। আধার আইনেই সে কথা বলা রয়েছে।
মামলাকারীদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন কারও নাগরিকত্ব যাচাই করতে পারে না। অথচ বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সেটাই করছে। বিচারপতিদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন বিহারের ভোটার তালিকা থেকে যাঁরা দেশের নাগরিক নন, তাঁদের বাদ দিতে পারে। দেশের নাগরিকদের ভোটার তালিকায় যোগ করতে পারে। যদিও নাগরিকত্বের বিষয়টি সংসদের এক্তিয়ারেরমধ্যে পড়ে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে লিখিত ভাবে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের উপযুক্ত নথি কী? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তার নির্দিষ্ট উত্তর দেয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের সামনে অভিযোগ তুলেছেন, বিহারে ২২ নভেম্বরের মধ্যে নতুন বিধানসভা গঠন করতে হবে। তার আগে ভোট ঘোষণা হবে। পাঁচ বছর আগের বিধানসভা ভোটের সময়সূচি অনুযায়ী চললে ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে আর বিহারের ভোটার তালিকায় কোনও রদবদল হবে না। নির্বাচন কমিশন ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। তখন কোনও প্রার্থীর ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে আবেদন করার সময় কোথায় পাবেন? বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, ‘‘যদি নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ থাকে, তা হলে কি সেপ্টেম্বর মাসেও গোটা ভোটার তালিকা পরিমার্জন প্রক্রিয়া খারিজ করে দিতে পারি না?”
যোগেন্দ্র যাদব বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমান অনুযায়ী, বিহারে ১৮ বছরের বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৮ লক্ষ। বিহারের ভোটার তালিকায় এমনিতেই তার থেকে কম, ৭.৯ কোটি ভোটার ছিলেন। খসড়া তালিকায় তা ৭.২ কোটিতে নেমে এসেছে। ভারতে তো বটেই, পৃথিবীতে প্রথম এমন ভোটার তালিকায় পরিমার্জন হচ্ছে, যেখানে কোনও নতুন ভোটার যোগ হয়নি। শুধু ভোটাররা বাদ পড়েছেন। নাম বাদ পড়াদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশি। ভারতে এত দিন পূর্ণবয়স্কদের ভোটার তালিকায় নাম তোলা সরকারের দায়িত্ব ছিল। এখন তা নাগরিকদের ঘাড়ে ঠেলেদেওয়া হয়েছে।
মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘ভোটার তালিকা থেকে মৃত, পাকাপাকি স্থানান্তরিত বা একাধিক জায়গায় নামের জন্য যে ৬৫ লক্ষের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের কারও ক্ষেত্রে কোনও তদন্ত হয়নি বা তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়নি। কমিশন নিজেই তা স্বীকার করেছে।’’ আর এক আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ তোলেন, ৪ অগস্ট পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকায় কম্পিউটারে ‘সার্চ’ করা যাচ্ছিল। তারপরে তা করা যাচ্ছে না। বুধবারও এই শুনানি চলবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)