Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পিছিয়ে চলেছে ২৬/১১ মামলা, চিন্তায় কেন্দ্র

২৬/১১ হামলার অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অনুরোধ জানান নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু নওয়াজ দিল্লিতে এসে ভারত-পাক সুসম্পর্কের কথা বলে গেলেও মোদীর ওই অনুরোধ রেখেছেন বলে প্রমাণ মেলেনি। উল্টে এখন নওয়াজের গদিই টলমল করছে। এই অবস্থায় ২৬/১১-র পাণ্ডাদের দোষী সাব্যস্ত করার কাজ কত দূর এগোবে, তা নিয়ে চিন্তায় দিল্লি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

২৬/১১ হামলার অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অনুরোধ জানান নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু নওয়াজ দিল্লিতে এসে ভারত-পাক সুসম্পর্কের কথা বলে গেলেও মোদীর ওই অনুরোধ রেখেছেন বলে প্রমাণ মেলেনি। উল্টে এখন নওয়াজের গদিই টলমল করছে। এই অবস্থায় ২৬/১১-র পাণ্ডাদের দোষী সাব্যস্ত করার কাজ কত দূর এগোবে, তা নিয়ে চিন্তায় দিল্লি।

রাওয়ালপিন্ডির বিশেষ সন্ত্রাস দমন আদালতে ২৬/১১ হামলার প্রধান অভিযুক্ত লস্কর-জঙ্গি জাকিউর রহমান লকভি-সহ সাত জনের বিচার চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাত বার ওই মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। কখনও বিচারপতি ছুটিতে, কখনও সাক্ষীরা গরহাজির, কখনও আবার সরকারি আইনজীবীরাই অনুপস্থিত নানা কারণে মামলার শুনানি স্থগিত হয়েছে। কাল, ৩ সেপ্টেম্বরও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানে চলতি অস্থিরতার কারণে সেই শুনানি হওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

নিজের শপথে শরিফকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদী। ২৬ মে শপথ নিয়ে পরের দিনই নওয়াজের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, মোদী নওয়াজকে সাফ জানান যে, ২৬/১১-র অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ইসলামাবাদকে পদক্ষেপ করতে হবে। তা হলেই প্রমাণ হবে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সত্যিই আগ্রহী পাকিস্তান।

এই বৈঠকের পরের দিন, ২৮ মে রাওয়ালপিন্ডিতে ২৬/১১ মামলার শুনানি ছিল। মোদী-নওয়াজ বৈঠকের কী ফল মেলে, তা দেখার জন্য রাওয়ালপিন্ডির দিকে চোখ রাখেন গোয়েন্দা-কর্তারা। দেখা যায়, সরকারি আইনজীবীরাই অনুপস্থিত। ওই আইনজীবীরা যুক্তি দেন, জামাত-উদ-দাওয়ার তরফে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই জামাত-উদ-দাওয়া হল আসলে লস্কর-ই-তইবার প্রকাশ্য সংগঠন। যার মূল মাথা মুম্বই-হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রী হাফিজ সঈদ। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, চৌধুরি আজহারের নেতৃত্বে সরকারি আইনজীবীরা লিখিত ভাবে আদালতে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেন। নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।

শুধু ২৮ মে নয়, এর পর জুন মাসের ৪ ও ১৮ তারিখ, জুলাই মাসের ২ ও ২৩ তারিখেও সরকারি আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকায় শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। ২৫ জুনও শুনানি ছিল। সে দিন আবার বিশেষ আদালতের বিচারপতি আত্তিকার রহমান ছুটিতে ছিলেন। এর মধ্যে মাত্র এক বার, ১১ জুন কিছুটা আদালতের কাজ হয়েছিল। সে দিন দু’জন সাক্ষীর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়। ২৩ জুলাইয়ের পরে আদালতে গরমের ছুটি পড়ে যায়। তার পরবর্তী শুনানিই আগামিকাল হবে বলে ঠিক রয়েছে।

রাওয়ালপিন্ডির ওই আদালতে যে সাত জনের বিচার চলছে, তাদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নাম লস্কর-কম্যান্ডার জাকিউর রহমান লকভি। হামলা চলাকালীন পাকিস্তানে বসে টেলিফোনে সে-ই আজমল কাসভ ও তার সঙ্গীদের নির্দেশ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। লকভি ছাড়া বাকিরা হল আবদুল ওয়াজিদ, মজহর ইকবাল, জামিল আহমেদ, শাহিদ জামিল রিয়াজ, হামাদ আমিন সাদিক ও আনজুম। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ২৬/১১ হামলা ঘটানো, তার পরিকল্পনা তৈরি ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মুম্বই হামলায় নিহত ১৬৬ জনের খুনের মামলাও ঝুলছে এদের নামে। সকলেই এখন রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বিচারাধীন বন্দি। জেলবন্দি থাকলেও তাদের দোষী সাব্যস্ত করে শীঘ্রই শাস্তি ঘোষণা হবে, এমন কোনও আশা দেখছে না দিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE