Advertisement
E-Paper

বিস্ফোরক বোঝাই ৩ গাড়ি উদ্ধার কেরলের মন্দিরের কাছে

ছ’টা হাসপাতাল আর চারটে মর্গ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাবার খোঁজ পাননি বছর ৩২-এর যুবক এনপি অনুপ। গত কাল কোল্লমের পুত্তিঙ্গল মন্দিরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই তাঁর বাবা নিখোঁজ। শনিবার রাতে ওই মন্দির চত্বরে হাজার হাজার দর্শনার্থীর মধ্যে ছিলেন অনুপের বাবাও।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৫

ছ’টা হাসপাতাল আর চারটে মর্গ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাবার খোঁজ পাননি বছর ৩২-এর যুবক এনপি অনুপ। গত কাল কোল্লমের পুত্তিঙ্গল মন্দিরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই তাঁর বাবা নিখোঁজ। শনিবার রাতে ওই মন্দির চত্বরে হাজার হাজার দর্শনার্থীর মধ্যে ছিলেন অনুপের বাবাও। কিন্তু ওই ঘটনার পরে হই-হট্টগোলে বাবার ঠিক কী পরিণতি হয়েছে, এখনও জানেন না অনুপ।

তাই খারাপ কিছুই ঘটেছে ধরে নিয়ে হাসপাতাল-মর্গে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। অনুপের কথায়, ‘‘জানি না বাবা বেঁচে আছেন কি না। তবে যা-ই ঘটুক, সেটা যেন জানতে পারি। এই দীর্ঘ অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না।’’ বাজির লড়াই দেখতে অনুপের বাবা এক বন্ধুর সঙ্গে মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেই বন্ধুর দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন অনুপ।

শনিবার ভোররাতে মন্দির লাগোয়া বাজি ঠাসা একটি গুদামঘরে আতসবাজির ফুলকি ছিটকে পড়েছিল। তার পরেই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ। এ দিন মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০। আহতের সংখ্যাও ছুঁয়েছে ৪০০। অনুপের মতো এখন তিরুঅনন্তপুরমের বিভিন্ন হাসপাতাল আর মর্গ ঘুরে প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

তদন্তে নেমে আজ পুলিশ মন্দিরের কাছে তিনটি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি খুঁজে পেয়েছে। বম্ব স্কোয়াড সেগুলি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া যে বাজির লড়াইয়ের জেরে এত বড় বিপর্যয়, তা বন্ধ করার কোনও আগ্রহই দেখাননি মন্দির কর্তৃপক্ষ। কেরলের এক হাজার মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ‘ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড’ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘বাজির প্রদর্শনী বন্ধের কোনও প্রশ্ন নেই। মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।’

যদিও ট্রাস্টের এই দাবি মানতে নারাজ অনেকেই। কেরলের মন্দিরে বাজির প্রদর্শনী অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরব কেরল হাইকোর্টের এক বিচারপতি। তিনি এ ব্যাপারে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। ‘‘মানুষের তৈরি এ ধরনের বিপর্যয় রুখে দেওয়ার সময় এসেছে। এ ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’’ আদালত জানিয়েছে, কাল শুনানি হবে। ধর্মীয় গুরু মাতা অমৃতানন্দময়ীর বক্তব্য, ‘‘প্রতি বছর এক ঘটনা ঘটে। ভগবান তো আর বধির নন। বাজি পোড়ানো হয় মানুষের আনন্দের জন্য। তাই সব চেয়ে ভাল পথ, এটা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া।’’

মন্দির কর্তৃপক্ষের মধ্যে ছ’জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বাজির লড়াইয়ে জড়িত পাঁচ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পলাতক ১৫ সদস্যের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।

দোষীদের সাজার কথা ভাবার সময় অবশ্য নেই স্বজনহারাদের। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘দিকে দিকে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে রাখা হয়েছে মৃতদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কোনটা কার এখনও জানা যায়নি। চিকিৎসকরা আত্মীয়দের সান্ত্বনা দিয়ে বোঝাচ্ছেন, ডিএনএ পরীক্ষার পরে সব বোঝা যাবে। তার পরেই তা তুলে দেওয়া হবে তাঁদের হাতে।’’ হাসপাতালে হাজির সমাজকর্মী ভি মুরলীধরন বলছেন, ‘‘এক এক জনের দেহ যে কত টুকরো হয়েছে কেউ জানে না। কোন হাতটা কার, সেটা পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁরা এখনও বাকরুদ্ধ। কবে দেহ ফিরে পাবেন, জানেন না।’’

এর মধ্যেই প্রবীণ দিনমজুর সোমন খুঁজে পেলেন নিজের ভাইপোর দেহ। পুড়ে যাওয়া দেহটা সামনে আসার পরে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। কোল্লমের কাছে কানিয়াপুরম থেকে সোনমের ভাইপো ৩৪ বছরের বিনোদ আট বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন বাজির খেলা দেখতে। এ ভাবে ফিরে আসবেন, ভাবেননি সোমন। কংক্রিটের টুকরো
গেঁথে গিয়ে হাত দু’টো বেঁকেচুরে একসা। কাঁদতে কাঁদতে বিনোদের কাকা বললেন, ‘‘ওর বৌ-বাচ্চাদের কী বলব জানি না।’’ হাসপাতালে শয্যাবন্দি যুবক দীপু কুমারও জানেন না কবে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন। তাঁর বুকে এমন ভাবে চাঙড় গেঁথে গিয়েছে যে ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েক মাস বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। ওঁদের প্রশ্ন একটাই, এত প্রাণ যাওয়ার পরেও কি সাধারণ নিরাপত্তা নিয়ে ভাববে না কেউ?

Puttingal Temple Kerala Death Explosive Recovered
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy