যে দিকে তাকানো যায় শুধুই গাড়ি আর গাড়ি। এক ইঞ্চি এগোনোর সুযোগ নেই। চার দিকে গাড়ির হর্ন, চিৎকার। সকলেই চান এগিয়ে যেতে। কিন্তু তীব্র যানজট কাটিয়ে এগোনোর উপায় নেই! এমনই ছবি দেখা গেল প্রয়াগরাজে। প্রশ্ন উঠছে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে। মহাকুম্ভে কোটি কোটি মানুষের ভিড় হবে, তা আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল সরকার। মেলা শুরুর আগে থেকেই পুণ্যার্থীদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বও দিচ্ছিল যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এমনকি, কোটি কোটি পুণ্যার্থীর ‘নিশ্ছিদ্র সুরক্ষা’ ব্যবস্থার দাবি করেছিল তারা, যাকে অভিহিত করা হয় এক নতুন শব্দবন্ধে— ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’। কিন্তু তার পরও কেন বার বার ‘অব্যবস্থা’র কারণে সমস্যায় পুণ্যার্থীরা, প্রশ্ন বিরোধীদের। পদপিষ্টের ঘটনা, ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড থেকে যানজট— নানা কারণে মহাকুম্ভের ব্যবস্থাপনা প্রশ্নের মুখে।
মহাকুম্ভে ত্রিবেণীসঙ্গমে ডুব দিতে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় প্রয়াগরাজে। লম্বা যানজটে আটকে অনেকেই ফিরতি পথ ধরেছেন। অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই জ্যামের মধ্যেই আটকে থাকলেন। শুধু ছোট, বড় যাত্রিবাহী গাড়ি নয়, পণ্যবাহী লরি, ট্রাক, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সও ফেঁসে গেল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার লম্বা যানজটে। কর্তব্যরত পুলিশদের বার বার সকলের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দয়া করে আর এগোবেন না। ফিরে যান!’’
অনেকেই সড়কপথে মহাকুম্ভে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের কথায়, ‘‘বিহার পেরোতেই গাড়ি আটকে পড়ছে তীব্র যানজটে।’’ মধ্যপ্রদেশের মাইহারের পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার থেকে শুরু হওয়া যানজটের কারণে প্রয়াগরাজের দিকে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে! পুলিশই জানিয়েছে, যানজট রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ জুড়ে । ওই যানজটে আটকে পড়া পুণ্যার্থীরা কেউ পাঁচ ঘণ্টা, কেউ আট ঘণ্টা, কেউ আবার ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন বলেও দাবি। অনেকেরই দাবি, ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও যানজট কাটেনি। অনেকে আবার মহাকুম্ভের পথের এই যানজটকে ‘বিশ্বের বৃহৎ যানজট’ বলেও মনে করছেন। অতীতে এমন বড় যানজট কবে আর কোথায় হয়েছে, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন:
তীব্র যানজটের নানা ছবি, ভিডিয়ো রবিবার থেকেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ হেন পরিস্থিতি এবং পুণ্যার্থীদের দুর্ভোগের কথা তুলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ‘অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের আবেদন, ‘‘যানজটে আটকে থাকা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত তীর্থযাত্রীদের মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখা উচিত।’’ তীর্থযাত্রীদের উদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথের সরকারকে। তার পরই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সিনেমা বা বিনোদন করমুক্ত করা যেতে পারে, মহাকুম্ভ উপলক্ষে আসা গাড়ির জন্য কেন তা করা হবে না?’’ অখিলেশের মতে, মহাকুম্ভে আসা গাড়ি যদি করমুক্ত করা হয়, তবে সমস্যার সমাধান হবে। মহাকুম্ভ আয়োজনে যোগী সরকার ব্যর্থ, দাবি এসপি প্রধানের।
অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লখনৌয়ের উত্তর রেলের আধিকারিক কুলদীপ তিওয়ারি জানান, স্টেশনের বাইরে এতই ভিড় যে, পুণ্যার্থীরাও স্টেশন ছেড়ে বার হতে পারছেন না। সব দিক বিবেচনা করেই শুক্রবার পর্যন্ত প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে।